ভিন্ন রক্তের গ্রুপের রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন
ভিন্ন রক্তের গ্রুপ হওয়ার পরেও এক রোগীর দেহে সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছে কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট। ‘এবিও ইনকমপ্যাটিবল’ পদ্ধতির মাধ্যমে কিডনি প্রতিস্থাপন বাংলাদেশে এটাই প্রথম বলে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
আজ শুক্রবার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপন নিয়মিত হলে রোগীর সঙ্গে ডোনারের রক্তের গ্রুপের মিল থাকার দরকার হবে না। ফলে বেড়ে যাবে কিডনিদাতার সংখ্য, সমাধান হবে ডোনার সংকটের, কমে যাবে কিডনি বেচা-কেনার মতো অবৈধ কাজ। এটা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বড় অর্জন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিজ্ঞতিতে বলা হয়, কুড়িগ্রামের ২৩ বছর বয়সী ইমরান ফিরোজের দুটো কিডনি বিকল হয়। তাঁর রক্তের গ্রুপ ছিল ‘ও’। ছেলেকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিতে চাইলেও ইমরানের মায়ের রক্তের গ্রুপ আলাদা থাকায় জটিলতা ছিল। কেননা কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনিদাতার সঙ্গে রোগীর রক্তের গ্রুপ ও টিস্যু টাইপিংয়ের যথেষ্ট মিল থাকতে হয়। গত ৫ জুলাই এবিও ইনকমপ্যাটিবল কিডনি প্রতিস্থাপন (এবিওআই) পদ্ধতির সফল প্রয়োগে তাঁর দেহে তাঁর মায়ের কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়।
কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ, বিশেষজ্ঞ নেফ্রোলজি টিম, ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. খুরশিদুল আলম ও অধ্যাপক ডা. সাজিদ হাসানের নেতৃত্বে ট্রান্সপ্ল্যান্ট টিম, ব্ল্যাড ব্যাংক স্পেশালিস্ট, অ্যানেসথেসিস্ট ও নার্সের সমন্বয়ে বিশেষ টিম এই ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম পরিচালনা করে। এরই মধ্যে ইমরান ও তাঁর মা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় গেছেন এবং তাঁরা ভালো আছেন।
কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে ‘প্লাজমাফেরেসিস’ পদ্ধতিতে রক্তের প্লাজমা বা রক্তরসকে রক্তকোষ থেকে আলাদা করা হয়। একটি ছাঁকনির মাধ্যমে বারবার ছেঁকে সেখান থেকে অ্যান্টিবডিগুলো আলাদা করা হয়। আর অ্যান্টিবডি আলাদা করলে অন্য রক্তের গ্রুপের কোনো ব্যক্তির কিডনি প্রতিস্থাপন করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকে না। ইমরান ফিরোজের এন্টিবডি ছিলো ১ : ১২৮ যা ব্ল্যাড এফেরেসিস মেশিনের মাধ্যমে ও কিছু ওষুধ প্রয়োগ করে ১ : ৮ এ নামিয়ে আনা হয়। পুরো প্রস্তুতি শেষ হতে সময় লাগে তিন সপ্তাহ। এরপরই ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়।
অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে এই প্রক্রিয়ায় কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টে সাফল্যের হার প্রায় ৯৫ ভাগ। স্বাভাবিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট রোগীদের মতো তাদের ক্ষেত্রেও ইনফেকশন ও কিডনি রিজেকশন ছাড়া অন্য তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। তবে ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর বিশেষ ফলোআপে থাকতে হয় কিছুদিন।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে প্রায় দুই কোটি লোক কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতিবছর সম্পূর্ণভাবে কিডনি বিকল হয় প্রায় ৪০ হাজার রোগীর। যাদের ৮০ শতাংশই মারা যায়। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে ৯৫ ভাগ হেমো ডায়ালাইসিস ও দুই থেকে আড়াই ভাগ সিএপিডি ও কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে, যাদের সবাই জীবিত এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে নেওয়া।