ফরম পূরণে ঘুষ দিতে বাধ্য হলেন মুক্তিযোদ্ধারা!
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের ই-পেমেন্টের ফরম পূরণের জন্য প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে ২০০ টাকা করে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধারা এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এবং দোষী ব্যক্তির শাস্তি দাবি করেছেন।
আশুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সূত্র জানায়, ই-পেমেন্টের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাতা দিতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য ই-পেমেন্টের জন্য পাঁচ পাতার একটি ফরম পূরণ করতে হয়। উপজেলা সমাজসেবা অফিস কাজটি করছিল। সমাজসেবা অফিসের নৈশ প্রহরী মো. শিপন ই-পেমেন্টের জন্য ফরম পূরণের কাজটি করছিলেন। এই ফরম পূরণ করার জন্য আশুগঞ্জ সমাজসেবা অফিসে গেলে শিপন ২০০ টাকা করে ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দিলে ফরম পূরণ করা যাবে না। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা ২০০ টাকা ঘুষ দিয়ে ফরম পূরণ করতে বাধ্য হন।
এই বিষয়টি জানাজানি হলে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী বাইন হীরা আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সৈয়দ রাফি উদ্দিনকে ডেকে পাঠান এবং তাঁর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি জানতে চান।
এ সময় সৈয়দ রাফি উদ্দিন বলেন, তিনি কোনো মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে টাকা নেননি। নৈশপ্রহরী শিপন ই-পেমেন্টের জন্য ওই ফরম পূরণের কাজটি করছিলেন। শিপন ৫০ টাকা করে নিয়ে থাকতে পারেন। সেটাও তদন্তে প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।
নৈশপ্রহরী মো. শিপন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ২০০ করে টাকা করে নয়, মুক্তিযোদ্ধারা স্বেচ্ছায় ৫০ টাকা করে দিয়ে গেছেন। কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা নেওয়া হয়নি।
আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল করিম জানান, নৈশপ্রহরী মো. শিপন ই-পেমেন্টের জন্য ফরম পূরণ করতে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে জোর করে ২০০ টাকা করে নেন। তিনি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সৈয়দ রাফি উদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে জানা নেই। আশুগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসে কোনো অফিস সহকারী নেই। অফিস সহকারী না থাকায় নাইটগার্ড মো. শিপন ই-পেমেন্টের জন্য ফরম পূরণের কাজটি করছিলেন। শিপন ৫০ টাকা করে নিয়ে থাকতে পারে।’
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমাজসেবা অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তফা মাহমুদ সারোয়ার এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
তবে জেলা সমাজসেবা অফিসের উপপরিচালক মাসুদুল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে ফোনে শুনেছি। কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আশুগঞ্জের ইউএনও মৌসুমী বাইন হীরা বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’