ম্যাক্স হাসপাতালের চারজনের বিরুদ্ধে মামলা
চট্টগ্রামে আড়াই বছরের শিশু রাইফা খানের মৃত্যুতে বেসরকারি হাসপাতাল ম্যাক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় মামলাটি দায়ের করেন শিশুর বাবা সাংবাদিক রুবেল খান।
মামলায় ম্যাক্স হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ বিধান রায়, চিকিৎসক দেবাশীষ সেনগুপ্ত, শুভ্রদেব এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক লেয়াকত আলীকে আসামি করা হয়।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, গলার ব্যথা নিয়ে নগরীর মেহেদীবাগ ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তির হলে, চিকিৎসকদের নানা অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রাইফা খানের মৃত্যু হয়। মামলায় হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও অবহেলার কথা তুলে ধরা হয়।
এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম জানান, তাঁরা মামলার এজাহারটি পেয়েছেন।
এ সময় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরোয়ার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিম উদ্দীন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস,বিএফইউজের সভাপতি রিয়াজ হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৯ জুন দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফা খান মারা যায়।
নিহত রাইফার পরিবার অভিযোগ, চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গলার ব্যথার কারণে কিছু খাচ্ছিল না রাইফা। ওই কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে ভর্তি করা হয় ম্যাক্স হাসপাতালে।
শিশুটির বাবা সাংবাদিক রুবেল খান জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই নানা অব্যবস্থাপনা দেখতে পাচ্ছিলেন তাঁরা। জরুরি বিভাগে বসিয়ে রাখা হয় দুই ঘণ্টা। এর মধ্যে রাইফাকে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। দেখা যাচ্ছিল যে, যখনই ইনজেনশন দেওয়া হচ্ছিল তখনই শিশুটি ছটফট করতে শুরু করে। পরে তিনি ইনজেকশনটি বদলে দিতে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন।
তখন হাসপাতাল থেকে একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডা. সুমন তালুকদারের পরামর্শ নেন। তিনি দুটি এক্স-রে পরীক্ষা দেন। সেই দুটিতে খারাপ কিছু ধরা পড়েনি বলেও দাবি করেন রুবেল খান। এরপর ডা. সুমন তালুকদার একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেন।
এরপর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরীকে ‘অনকলে’ আনে রাইফার পরিবার। রুবেল খানের দাবি, কেবিনে এসে শিশুটিকে পরীক্ষা না করেই কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র দেখেই তিনি ওষুধ লেখেন। আগের ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে কেবল একটি ইনজেকশন যোগ করেন।
রাতে রাইফার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে প্রচণ্ড খিঁচুনি ওঠে শিশুটির। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যায় রাইফা।
এ ঘটনায় দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপেক্ষিতে হাসপাতালের দুই চিকিৎসক দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও শুভ্র দেবের চিকিৎসায় অবহেলা প্রমাণিত হলে তাঁদের অব্যাহতি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরেক চিকিৎসক ডা. বিধান রায় চৌধুরিকে হাসপাতালে আর না ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।