আ. লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের প্রচার শুরু হতে না হতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। রীতিমতো দুই পক্ষই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ বেশকিছু অভিযোগ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার নির্বাচনী প্রচারকালেও দুই মেয়র প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে পোস্টার ছেড়া ও নির্বাচনী কাজে বাধা দেওয়ার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন।
সকালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের জিন্নাহ নগর, কয়েরদাড়া, বিসিক এলাকায় গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও প্রচার চালান। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
অন্যদিকে নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আরডিএ খাঁচা মার্কেট ও সাহেব বাজারের বিভিন্ন মার্কেটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও প্রচার চালান। এ সময় মার্কেট সমিতির নেতা ও বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
গণসংযোগকালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বুলনপুর তাঁর ফেস্টুন ও পোস্টারবাহী পিকআপ ভ্যানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মীরা। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বেলদারপাড়ায় নৌকা প্রতীকের কর্মীরা ধানের শীষ প্রতীকের টাঙানো ফেস্টুন ভাঙচুর করে এবং ঝোলানো পোস্টার ছিড়ে ফেলে। তারা বালিয়াপুকুর মোড় থেকে রুয়েট ও ভদ্রার মোড়, অলকার মোড় থেকে আলুপট্টির মোড় এবং রাজশাহী সিটি কলেজ গেট থেকে সার্ভে ইনস্টিটিউট পর্যন্ত লাগানো ধানের শীষ প্রতীকের সব ফেস্টুন খুলে ফেলেছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে জিপিওর সামনে, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট বনগ্রাম এলাকায়, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বালিয়াপুকুর এলাকায় ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিনোদপুর বাজারে ধানের শীষ প্রতীকের প্রচার মাইকের কর্মীদের চরথাপ্পড় মেরে প্রচার কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ নজমুল হক উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণালীর পেছন মোড় পর্যন্ত রাস্তায় ধানের শীষ প্রতীকের কোনো ফেস্টুন ও পোস্টার লাগাতে দেয়নি নৌকা প্রতীকের লোকজন। এ সময় তারা ধানের শীষ সমর্থিত কর্মীদের লাঞ্ছিত করেছে।
বুলবুল বলেন, তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু সুনির্দিষ্ট সাতটি অভিযোগ সংবলিত একটি অভিযোগপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন। সেখানে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট অভিযোগ এনেছেন।
কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁদের অভিযোগের কোনো গুরুত্ব দেননি। বুলবুলের অভিযোগ, রাসিক নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড একেবারেই নেই। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। মহানগর পুলিশের কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মহানগর ডিবি পুলিশের ওসি বিএনপি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। বিএনপির কর্মীদের নির্বাচন কাজে অংশ না নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
বুলবুল বলেন, দীর্ঘদিন থেকে রাজশাহী নগরীতে কোথাও কোনো ককটেল ফোটেনি। অথচ পুলিশ ককটেল ফাটানোর মিথ্যা মামলা সাজিয়ে বিএনপির কর্মীদের এসব মামলার আসামি করে গ্রেপ্তার করে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকে এ ধরনের ভূমিকা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান বুলবুল।
রাজশাহীতে বৃহস্পতিবার গণসংযোগকালে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ছবি : এনটিভি
অন্যদিকে একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে তাঁর বিলবোর্ড নষ্ট করা হয়েছে। পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়েছে।
বিএনপির কর্মীরা এসব অপকর্ম করছে দাবি করে লিটন বলেন, এ প্রমাণ তাঁর কাছে রয়েছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করে লিটন বলেন, আমরা কোথাও তাঁদের বাধা সৃষ্টি করিনি।
লিটনের দাবি, ‘বিএনপি প্রার্থীর প্রচারকর্মীর সংখ্যা অল্প আছে। তাঁদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব আছে। তাঁদের কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের টানাপড়েন আছে। এ কারণে বিএনপির কর্মীরা আওয়ামী লীগের কর্মীদের মতো আগ্রহী হয়ে সারা শহরব্যাপী পোস্টার, ব্যানার বা বিলবোর্ড লাগায়নি। এটা তাদের ব্যর্থতা। তাদের ব্যর্থতার দায় আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর একটা নোংরা খেলা বিএনপি খেলছে। এ ধরনের নোংরা খেলা তাঁরা খুলনাতে করেছে, গাজীপুরেও করেছে, রাজশাহী বরিশাল ও সিলেটেও তাঁরা একই কাজ করতে যাচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই। আমরা পরিষ্কার আছি, স্বচ্ছ আছি এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনগণকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
লিটন বলেন, তাঁর পক্ষে তাঁর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মুসাব্বিরুল ইসলাম রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে বিলবোর্ড নষ্ট করা এবং পোস্টার ছেড়ার অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আতিয়ার রহমান। তিনি জানান, শুরুতেই দুই প্রার্থীর অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে অনেকটাই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশন সব দিক থেকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে যদি কোনো প্রার্থী অভিযোগ দেয় তাহলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে এরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। তবে কিছু সময় গেলে এসব অভিযোগ আর থাকবে না বলেও জানান তিনি।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মীর ইকবাল জানান, নির্বাচনে অভিযোগ থাকবেই। তবে দেখতে হবে, যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেটি কতটা সঠিক। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন রয়েছে। তারা অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। তবে তাঁর দাবি, বিএনপির মেয়র প্রার্থী দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্নস্থানে মিথ্যে কথা বলে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তাঁরা নিজেরাই গাড়ির কাঁচ ভেঙে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। গত দুদিনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীর পোস্টার ও ব্যানার টানাতে দিচ্ছে না। তাঁরা বিভিন্নভাবে আমাদের কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সুস্পষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতেই আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এসব অভিযোগ দিয়েছি। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছি।