চট্টগ্রামে হাসপাতাল মালিকদের ধর্মঘট স্থগিত
চট্টগ্রামে হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও জরিমানার প্রতিবাদে বেসরকারি হাসপাতাল ও প্যাথলজিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা ধর্মঘট সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন বেসরকারি হাসপাতাল মালিক ও চিকিৎসকরা।
আজ সোমবার এ ধরনের অভিযান বন্ধে প্রশাসনের আশ্বাসের ভিত্তিতে ধর্মঘট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল।
ডা. ফয়সাল ইকবাল বলেন, ‘আমাদের সেবার মান উন্নত করার জন্য অবশ্যই উনারা অভিযান চালাতে পারেন। আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু, মনিটরিং করার নামে একটা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। আপনারা অস্বীকার করতে পারেন না। যেহেতু বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের দাবি ছিল, এই ধরনের যে মনিটরিং সেল আসবেন, উনারা স্বাগত জানাবেন। কিন্তু মনিটরিং সেল যে উপায়ে, যে নিয়মে যে ধরনের অভিযানটা পরিচালিত করেছে, যেটা আমাদের চিকিৎসা পেশাকে আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করেছিল। উনাদের দাবি ছিল, ভীত সন্ত্রস্ত ছিল, নিরাপত্তাহীনতায় ছিল চিকিৎসক সমাজ, উনারা দাবি করেছিলেন এ মনিটরিং সেলের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য। যেহেতু তাদের দাবি মেনে প্রশাসন তাদেরকে প্রত্যাহার করেছেন সে কারণে আমরা চট্টগ্রাম বিএমএ বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সমিতিকে অনুরোধ জানিয়েছি, তারা তাদের এসব আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।’
গত ২৯ জুন শিশু রাইফা খান মারা যাওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গঠন করা হয়, দুইটি তদন্ত কমিটি। এরপরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা তদন্ত কমিটিতে বেরিয়ে আসে হাসপাতালটির নানা ত্রুটি বিচ্যুতির কথা।
চট্টগ্রামে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। ছবি : এনটিভি
তারপরেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি দল অভিযান চালিয়ে ত্রুটি বিচ্যুতির অভিযোগে ম্যাক্স হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা ও সিএসসিআর হাসপাতালকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করে। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ধর্মঘটের ডাক দেন হাসপাতাল মালিকেরা।
অভিযানের বিষয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘এখানে কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করা হয়নি, কোনো প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করা হয়নি। আমরা চাই, আমাদের ডেভেলপমেন্ট। কারণ আমাদের একটা বিরাট সংখ্যক রোগী কিন্তু দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে কিছু ভুলত্রুটির কারণে। আমরা সেই ভুলত্রুটিগুলো আইডেনটিফাই করতে চাই, এইগুলা সংশোধন করতে চাই। এবং সেই ডেভেলপমেন্টের জায়গায় আমরা পৌঁছাতে চাই। তো এই ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, যারা স্টেকহোল্ডার রয়েছেন, প্রত্যেকের কিন্তু একটা দায়িত্ব রয়েছে। মূলত এখানে কাউকে বাধা দেওয়ার জন্য না, কাউকে ব্যবসায়িক ক্ষতি করার জন্য না, আমরা চাই সকলে মিলে একটা উন্নত জায়গায় পৌঁছাতে যাতে করে আমাদের কোনো রোগীকে বিদেশে যেতে না হয়। মূলত এইটাই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য।’
কিন্তু হাসপাতালগুলো বন্ধ থাকায় কাল থেকে দুর্ভোগে পড়ে শত শত রোগী। ভিড় জমায় হাসপাতালগুলোর সামনে। বিশেষ করে, হৃদরোগ বিভাগগুলোতে আতঙ্ক দেখা দেয়।
এক রোগী বলেন, ‘ফজরের সকাল থেকে শুরু হইছে। আমি ব্যথা সহ্য করতে পারতেছি না। আমি ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়া সিএনজি করি মেডিকেল চলি আইছি। আসার পরে এইখানে আমারে বলছে যে, ঐখানে যাও। হেইখানে গেছি। তিন জায়গা ঘুরিয়া আমাকে ডাক্তারের কাছে গেছি, ডাক্তার বলে, আজকে না বুধবারে আসবেন। আমি কোথায় যাব? আমি আবার এইখানে আই, টিকেট নিয়ে কইছি এইখানে ভর্তি হবো। আজ আমারে ভর্তি করতেছে না।’
তবে, এতকিছুর পর আজও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ জানান রোগীরা। এক রোগী বলেন, ‘ট্রিটমেন্ট শেষ হওয়ার আগেই ছিড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিছে এক নার্স আরকি। মনে হয়, পড়তেছে ডাক্তারি। ও বুঝে নাই। এইখানে আসলে অবহেলা একটু বেশি এখন। আগের মতো নাই। মানে রোগীদের সাথে ব্যবহারগুলকা ভালো করে না ওরা। দূর দূর ব্যবহার করে। হাত দিয়ে ধরেও দেখে না। মুখে যা বলি তাই। জ্বর আছে কিনা কতটুকু আছে, বা উনার ব্যথাটা কি রকম। ধরবে না। প্রবলেম দেখে না। শুনেই ওষুধটা লিখে দেয়।’
চট্টগ্রামে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভুক্তভোগী এক রোগী। ছবি : এনটিভি