শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় রাণীকে বিদায়, দাফন সম্পন্ন
‘চলচ্চিত্রের আগে নাটকে কাজ করতাম রাণী আপার সাথে। তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। কোনো দিন যদি দেরি করে শুটিংয়ে যেতাম তখন তিনি সবার সামনে শাসন করতেন। সব কিছু মাথা পেতে নিতাম। অনেক শ্রদ্ধা করতাম উনাকে। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। সবাই আপার জন্য দোয়া করবেন।’
আজ শনিবার বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে এফডিসিতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় অভিনেত্রী রাণী সরকারের। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে উপরের কথাগুলো এনটিভি অনলাইনকে বলেন অভিনয় শিল্পী আনোয়ারা।
রাণী সরকারের জানাজায় আরো উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নায়ক ফারুক, আলমগীর, রিয়াজ, শাকিব খান, জায়েদ খান,পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, বদিউল আলম খোকন, অপুর্ব রানাসহ চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলীরা।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশে চলচ্চিত্র যাত্রার শুরু থেকে রাণী সরকার যুক্ত ছিলেন। নিজের কাজ দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। আমৃত্য তিনি কাজ করে গেছেন। তাঁর এই কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উনাকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছে। সবাই দোয়া করবেন উনার যেন বেহেশত নসিব হয়।’
নায়ক ফারুক বলেন, ‘রাণী সরকারের মতো শিল্পীরা আমাদের প্রাণের মানুষ। কারণ উনাদের সাথে কেটেছে জীবনের অধিকাংশ সময়। আজ রাণী সরকার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। জীবনের শেষ কিছুদিন অনেক কষ্ট করে তিনি কাটিয়েছেন। তারপরও নিজের আত্মসম্মান নিয়েই দিন কাটিয়েছেন। যেখানেই থাকুক আল্লাহ যেন উনাকে ভালো রাখেন। ’
অভিনেতা জায়েদ খান বলেন, ‘রাণী সরকারের শেষ ইচ্ছে ছিল উনার মরদেহ যেন এফডিসিতে আনা হয়। আর আজিমপুরে যেন দাফন করা হয়। আমরা উনার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাই করেছি। উনি আমাদের সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন। উনাকে হারিয়ে আমাদের অনেক বড় একটা জায়গা খালি হয়ে গেল, যা পূরণ হবার নয়।’
এদিকে এফডিসিতে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও জানাজা শেষে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে দাফন করা হয় রাণী সরকারকে ।
প্রবীণ অভিনেত্রী রাণী সরকার আজ শনিবার ভোর ৪টায় রাজধানীর মতিঝিলের একটি হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর শরীর হঠাৎ খারাপ হলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ ভোর ৪টায় চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
রাণী সরকার বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন ষাটের দশকে। বাংলা চলচ্চিত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৬ সালে তাঁকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করে বাংলাদেশ সরকার।
রাণী সরকার বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ থানার সোনাতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম সোলেমান মোল্লা এবং মায়ের নাম আছিয়া খাতুন। তিনি সাতক্ষীরার সোনাতলা গ্রামের ইউপি স্কুল থেকে প্রাথমিক পাঠক্রম শেষ করেন। এরপর তিনি খুলনা করোনেশন গার্লস স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন।
রাণী সরকারের অভিনয় জীবন শুরু করেন ১৯৫৮ সালে বঙ্গের বর্গী মঞ্চনাটকের মাধ্যমে। একই বছরই তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় এ জে কারদার পরিচালিত ‘দূর হ্যায় সুখ কা গাঁও’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এরপর ১৯৬২ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার এহতেশামুর রহমান পরিচালিত উর্দু চলচ্চিত্র চান্দাতে অভিনয় করেন। সেই ছায়াছবির পর থেকে তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম মেরীর বদলে নতুন নাম হয় রাণী সরকার।
‘চান্দা’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর উর্দু ছায়াছবি ‘তালাশ’ ও বাংলা ছায়াছবি ‘নতুন সুর’-এ কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করেন রাণী সরকার। এই ছায়াছবি দুটিও বেশ জনপ্রিয় হয়। এরপর তিনি প্রায় এক হাজারেরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি একজন নৃত্যশিল্পীও ছিলেন।