যশোরে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত, উদ্ধার অভিযান স্থগিত
যশোরে গতকাল রোববার রাতে বিধ্বস্ত হওয়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজের উদ্ধার কার্যক্রম আজকের মতো স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন যশোর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক পরিমল কুণ্ডু।
পরিমল কুণ্ডু জানান, বিধ্বস্ত বিমানের ৮০ ভাগ স্ক্র্যাব ওঠানো হয়েছে। ইঞ্জিন ও একটি ককপিট পানির নিচে থেকে গেছে। আগামীকাল সকাল থেকে সেগুলো ওঠানোর চেষ্টা শুরু হবে।
এদিকে আজ সোমবার সকালে উদ্ধার কাজ চলাকালে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের বিভিন্ন অংশ পাওয়া গেছে। নিহত দুই পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার মো. সিরাজুল ইসলাম ও স্কোয়াড্রন লিডার এনায়েত কবির পলাশের হাত মাথাসহ শরীরের কিছু অংশ পাওয়া গেলেও পুরো দেহ পাওয়া যায়নি।
এমনকি পুরো দেহ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা।
উদ্ধারকারী ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক পরিমল চন্দ্র কুণ্ডু বলেন, ‘গতকাল থেকে যদি আমরা বলি, আমরা রাত ৯টা ১১ মিনিটে প্রথম সংবাদ পাই, আমাদের একজন কমিউনিটি ভলেন্টিয়ারের মাধ্যমে। তাৎক্ষণিকভাবে রেসপন্স করে আমরা এখানে আসি। পরবর্তী সময়ে আমরা উদ্ধারকাজ শুরু করে দেই। এবং শরীরের বেশ কিছু অংশ বিশেষ এবং উড়োজাহাজের কিছু অংশ আমরা গতকাল রাতেই উদ্ধার করি। আজকে সকাল ৯টা থেকে আবার আমরা উদ্ধার অভিযান শুরু করি। আনুমানিক আমরা ধারণা করতে পারি, জাহাজের প্রায় ৩৫ শতাংশ আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। আর ডেডবডির অংশ বলতে, বিস্ফোরণে আলাদা হওয়ার কারণে, হাত মাথা এগুলো পেয়েছি, কিন্তু কমপ্লিট বডি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই আরকি।’
যশোরে বুকভরা বাওড়ে আজ সোমবার দিনভর উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা
গতকাল রোববার রাত ৯টার পর যশোরে বিমান বাহিনীর কে-৮ডব্লিউ (K-8W) মডেলের একটি প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ যশোর বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর পরই বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে থাকা স্কোয়াড্রন লিডার মো. সিরাজুল ইসলাম ও স্কোয়াড্রন লিডার এনায়েত কবির পলাশ নিহত হন।
যশোর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আলমগীর পাঠান বলেন, ‘রাত ৮টা ৫১ মিনিটে যশোর বিমানবন্দর থেকে বিমানটি উড্ডয়ন করে। ৯টা ৪ মিনিটে যশোর এয়ারপোর্টের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে বিমানটির পাইলটদের সর্বশেষ কথা হয়। এর দুই মিনিট পরই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে বিমানটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ’
অন্যদিকে, আরিচপুর গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিমানটি প্রথমে আকাশে কিছু সময় অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে তারা। এর পরই সেটি প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হয় এবং তাতে আগুন ধরে যায়। আগুন ধরা অবস্থায় বিমানটি বুকভরা বাওড়ের মাঝামাঝি এলাকায় পানিতে পড়ে যায়।
বিমান বিধ্বস্তের খবর পেয়ে শত শত গ্রামবাসী সেখানে জড়ো হয়। খবর পেয়ে যশোর বিমান বাহিনী, যশোর ক্যান্টনমেন্ট, যশোর ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছান।
কিন্তু বৃষ্টি ও কাদামাটির রাস্তার কারণে উদ্ধারকর্মীদের সেখানে পোঁছাতে অনেকটা সময় লেগে যায়। রাত পৌনে ২টার দিকে খুলনা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে মূল উদ্ধারকাজ শুরু করে। পরে তাদের সঙ্গে নৌবাহিনীর একটি দলও যোগ দেয়।
ভোর ৪টার সময় উদ্ধার তৎপরতা সাময়িক স্থগিত করা হয়। পরে সকালে এই উদ্ধারকাজ আবারও শুরু হয়। বিকেলে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার এসে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। সন্ধ্যা ৭টায় আজকের মতো উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়।