নাক দিয়ে বাঁশি বাজিয়ে সংসার চলে ওমর আলীর
বাঁশি বাজানো অনেকের নেশা, আবার কারো পেশা। তবে নাক দিয়ে বাঁশি বাজানো এটা ভিন্ন ব্যাপার, বলা চলে অসাধ্য। আর এই অসাধ্য সাধন করেছেন মো. ওমর আলী (৭০)। প্রথম দিকে মুখ দিয়ে বাঁশি বাজালেও দাঁত পড়ে যাওয়ায় এখন নাক দিয়ে বাঁশি বাজান তিনি। আর এই বাঁশি বাজিয়েই চলে তাঁর সংসার।
ওমর আলীর স্ত্রী মারা গেছেন দুই বছর আগে। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। এক মেয়ে আর নাতনি জামাই থাকেন রাজধানীর কল্যাণপুরের নতুন বাজার এলাকার পোড়াবস্তিতে। এখন তাঁদের সঙ্গেই থাকেন তিনি।
ওমর আলী নাক দিয়ে বাঁশি বাজিয়ে বাঁশি বিক্রি করেন। পাশাপাশি বিক্রি করেন পান ও সিগারেট। এসব বিক্রি করে প্রতিদিন তাঁর ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মতো আয় হয়।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বাসিন্দা ওমর আলী দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আছেন এই ঢাকা শহরে। ইট-কাঠের এই শহরে এ যেন এ অন্য রকম বিনোদনের উৎস। তাঁর দেখা মেলে নগরীর বিভিন্ন রাস্তা ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। তবে তিনি অনেক দিন ধরেই ব্যবসা করেন রাজধানীর শ্যামলী শিশু পার্কে।
সম্প্রতি শ্যামলী পার্কে দেখা মেলে ওমর আলীর। এক কাঁধে ছিল পান সিগারেটের ঢালা, আরেক কাঁধে বাঁশির থলে। তাঁকে ঘিরে ছিল নানা বয়সের মানুষ। সবাই মুগ্ধ হয়ে শোনে তাঁর গান ও বাঁশি বাজানো।
বললাম, চাচা কেমন আছেন?
হাসি-মুখে উত্তর এলো, ‘ভালো। তয় আপনে কেমন আছেন?
উত্তর দিলাম, ‘জি ভালো।’ তারপর শুরু হয় কথাবার্তা।
‘কতদিন ধরে বাঁশি বাজান?’
বললেন, ‘আমার যখন থেকে বুঝ হয় এইডা বাঁশি আর এইডা থেইকা সুর বাহির হয়, তখন থিকা বাঁশি বাজাই।’ ওমর আলী বলেন, ‘বাবা, আমি কিন্তু কোনো শিল্পী না বাবা, আমি বাঁশিওয়ালা। আমার বাঁশির সুর আসে ভেতর থেইকা। বাঁশি কোনো সহজ জিনিস না বাবা, বাঁশিতে সাধনার দরকার আছে।’
আপনার বাঁশি বাজানোর গুরু কে?
উত্তরে ওমর ফারুক বলেন, ‘গুরু কী? আমার কোনো গুরু নাই। আমার গুরু আমি নিজেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওমর আলী বলেন, ‘বাবা মুক্তিযুদ্ধ করছি। ২০ রাউন্ড গুলিও ফুটাইছি। তয় কাগজ (সনদপত্র) লইবার পারি নাই। দেশ স্বাধীন হইল, তারপর আসলাম ঢাকাতে। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থাইকা রাত ৩টা পর্যন্ত ব্যবসা করি। তাতেই ঘরভাড়া দিয়ে কোনো রকম চলি।’
সরকারের কাছে খাস জমি বরাদ্দের আবেদন জানিয়ে ওমর আলী বলেন, ‘বাবা, আমি ভূমিহীন, সরকার যদি আমাকে একটু সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে আমার খুব উপকার হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাবা, আমার ইত্যাদি অনুষ্ঠানে যাওয়ার খুব ইচ্ছা।’