হাইওয়ে পুলিশ দপ্তরে শিডিউল কিনতে বাধা
তুহিন মিয়া পেশায় ঠিকাদার। ছোট বড় সব ধরনের ঠিকাদারি কাজ করেন। মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজ নামে তাঁর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন মালামাল সরবরাহের ব্যাপারে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে শিডিউল কিনতে যান হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর রিজিয়ন, ফরিদপুরের কার্যালয়ে তুহিন মিয়া।
সেখানে গিয়েই বিপদে পড়েন তুহিন মিয়া। যখন তাঁর কাছ থেকে জানতে পারেন তিনি শিডিউল কিনতে এসেছেন, সেই সময় পুলিশ তাঁকে সবার সামনে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন।
খবর পেয়ে সাংবাদিকরা সেখানে গেলে তুহিন মিয়া দুঃখ করে বলেন, ‘এই অফিসে যে শিডিউলটি বিক্রি হচ্ছে, সেই কাজের শিডিউল কিনতে এসেছি। কিনব কী করে এখানে পুলিশরা নিজেরাই তাদের নির্ধারিত লোক দিয়ে শিডিউল কিনে নিজেরাই জমা দিয়ে কাজ করে থাকেন। এই জন্য আমাকে এখান থেকে বের করে দেওয়া হলো। আমি এখন ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কাছে যাব এ ব্যাপারে অভিযোগ জমা দিতে।’
এভাবে সাংবাদিকদের সামনে রোববার দুপুরে করিমপুর হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম নিজে পুলিশের লোকজন নিয়ে রাজমনি এন্টারপ্রাইজ, রিজভী এন্টারপ্রাইজ ও নূরজাহান এন্টারপ্রাইজের শিডিউল ক্রেতাদের বের করে দেন। এ সময় ঠিকাদাররা ক্ষুব্ধ হয়ে সেখান থেকে চলে যান।
পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশ আছে বলে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় কর্মরত প্রায় ২০ জন সাংবাদিককে বের করে দেওয়া হয়। এর পর সাংবাদিকরা মাদারীপুরের হাইওয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাঁর মোবাইলে কল দিলে তিনি ধরেননি।
এ সময় সাদা পোশাকে বের হয়ে আসেন মাদারীপুর হাইওয়ে পুলিশের সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, উপরের নির্দেশ থাকায় আপনাদের উপরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আর আমি যেহেতু এই দপ্তরের না, সেই জন্য এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। আপনারা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেন।
এর আগে ঠিক একই কথা বলেন করিমপুর হাইওয়ে পুলিশের এসআই রবিউল ইসলাম। সেই সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।
এ ব্যাপারে শিডিউল ক্রেতা রাজমনি কনস্ট্রাকশনের শফিউল আলম বলেন, গত বেশ কয়েকদিন ধরে পুলিশ এনে এই অফিসের নিচে বসিয়ে রেখে শিডিউল কিনতে আসা লোকদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোনো লোক এখান থেকে শিডিউল কিনতে পারছে না। এখানে পুলিশের নির্ধারিত লোক দিয়ে শিডিউল কিনে নিজেরাই কাজ করে থাকে।
এ ব্যাপারে জানতে মাদারীপুরের হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে বিকেলে মোবাইলে যোগাযোগ করলে মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা কাউকে বাধা প্রদান করব না। যারা শিডিউল কিনতে চায়, সঠিক কাগজপত্র থাকলে সে কিনতে পারবে।
কেন সাংবাদিক ও শিডিউল ক্রেতাদের বাধা দেওয়া হলো জানতে চাইলে মাহফুজুর রহমান বলেন, যারা বাধা দিয়েছে তারা হয়তো বুঝতে পারেনি।
এর আগে হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও সেবা গ্রহণের একটি উন্মুক্ত দরপত্র বের হয়। সেখানে অফিসের বিভিন্ন মালামাল ক্রয় করা হবে জানানো হয়। ওই কার্যালয়ে সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিডিউল বিক্রির কথা রয়েছে। আর আগামী মঙ্গলবার দুপুর ১২টার ভেতর জমা দিতে বলা হয়। এ ছাড়া ওই দিন দুপুর ২টায় বাক্স খোলা হবে বলে জানানো হয়।