আইসিটি আইনের মামলা : রাশেদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৯ জুলাই
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানের বিরুদ্ধে করা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৯ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ রোববার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আমিনুল হক এ দিন ধার্য করেন।
ঢাকার অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে জানান, আজ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে এ মামলার এজাহার ও প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) এসে পৌঁছালে বিচারক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৯ জুলাই দিন নির্ধারণ করেন।
এর আগে আজ শাহবাগ থানায় কোটা আন্দোলনের নেতা মুহাম্মদ রাশেদ খানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়।
নথি থেকে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন যা প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রক্রিয়াধীন। এরপরও গত ২৭ জুন রাশেদ খান ‘কোটা সংস্কার চাই’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে ভিডিও লাইভে এসে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে মানহানিকর বক্তব্য ও মিথ্যা তথ্য দেন।
এসব মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। এ ঘটনায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন ছাত্রলীগ নেতা।
এদিকে আজ সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি মিডিয়া) মাসুদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মিরপুর থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানকে আটক করা হয়েছে। পরে তাঁকে শাহবাগ থানায় দায়ের করা তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’
তবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন এনটিভি অনলাইনের কাছে দাবি করেন, ‘আমাদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, মাহফুজ খান ও ইয়ামিন—এ তিনজনকে মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনের ভাসানটেক বাজারের মজুমদার মোড়ের ১২ নম্বর বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সাদা পোশাকের পুলিশ ছাড়াও পোশাকধারী পুলিশ ছিল।’
তবে উপকমিশনার মাসুদুর রহমান শুধু রাশেদ খানকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেছেন।
গ্রেপ্তারের আগে নিজের বাসা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে রাশেদ খান ভয়ার্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে বাঁচান প্লিজ, আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে ধাওয়া দিয়েছে ডিবি পুলিশে। ভিডিওটি শেয়ার করুন।’ এর পর তিনি যেখান থেকে কথা বলছেন, সেই ঠিকানাও দেন।
ঘটনার পর রাশেদ খানের স্ত্রী রাবেয়া আলো এনটিভি বলেন, ‘রাশেদকে ডিবি পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তুলে নিয়ে গেছে বাসা থেকে। এ সময় তাঁকে অনেক মেরেছে।’ এই বলে কান্না করতে থাকেন তিনি। রাবেয়া আলো আরো জানান, তিনি এখন থানায় জিডি করতে যাচ্ছেন।
গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে বাধা দিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। এতে ১০ জনের মতো আহত হন। আহতরা অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
এর পর পরই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ অধিকার ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে ‘সংবাদ সম্মেলনে বাধা ও হামলা’র প্রতিবাদে আজ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং সারা দেশে বিক্ষোভ অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে তাঁদের কোনো কর্মসূচি নেই। আগামীকাল সোমবার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করা হবে। সারা দেশে পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করে ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করে আন্দোলনকারীরা। পরে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারীরা এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিলও করে। কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপন এখনো জারি হয়নি।
তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে গ্রেপ্তার রাশেদকে হাজিরের খবর পাওয়া যায়নি।