কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা
পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে বাধা দিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে ১০ জনের মতো (কমবেশি) আহত হন।
এর মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
তবে হামলা ও মারধরের ব্যাপারে ছাত্রলীগের নেতাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা না। তার পরও যদি কিছু ঘটে থাকে আমি খোঁজ নিচ্ছি।’
এই ঘটনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে বাধা এবং হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ নেতারা হত্যার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।
তাদের এই হুমকির জবাব রাজপথে দেওয়া হবে বলে জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যেই আজকে হামলার ঘটনা ঘটল।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কোটা আন্দোলনকারীরা জানান, আজ বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। সে জন্য আন্দোলনকারীরা নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগেই কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। এ সময় সেখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরাও আসেন। এ সময় সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আন্দোলকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। কয়েকজনকে লাইব্রেরির সামনে রাস্তায় ফেলে পিটানোর দৃশ্যও দেখা যায় সেই ভিডিওতে।
মারধরে আহতদের মধ্যে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরও রয়েছেন। তিনি বেশ আহত হয়েছেন বলে ঘটনাস্থলে থাকা সাধারণ আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এনটিভি অনলাইনের কাছে দাবি করেন, ‘নুরকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে সবচেয়ে বেশি মারধর করা হয়েছে। মারধরের হাত থেকে বাঁচতে তিনি উঠার চেষ্টা করলেও তাকে টেনে-হিঁচড়ে মারা হয়েছে। মারধরে অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী অংশ নেন।’
‘মারধরের একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কর্মচারীরা নুরকে গ্রন্থাগারের ভিতর নিয়ে গেলে সেখানে ঢুকেও তাঁকে মারা হয়।’
নুরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ এখন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ভেতরে অবস্থান করছেন। আর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিন ও গ্রন্থাগারের সামনে রয়েছে।
এ দিকে হামলা ও মারধরের প্রায় এক ঘণ্টা পর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে গ্রন্থাগার থেকে একজন শিক্ষার্থী বেরিয়ে এলে তাঁকে মারধর করা হয়। গ্রন্থাগারের সামনের রাস্তায় ফেলে তাঁকে কয়েকজন মারধর করে।
জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থীর নাম আরশা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। সূর্য সেন হলে থাকেন। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানিকে এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
এদিকে আমাদের ঢামেক সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আহতরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল হক নুর (২৪), আব্দুল্লাহ (২৩), আতাউল্লাহ (২৫), সাদ্দাম হোসেন (২৫), সাহেদ (২৫) ও হায়দার (২৩)।
আহত ছাত্ররা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের উপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়িরা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া এনটিভি অনলাইনকে জানান, মারধরের কারণে ছয় ছাত্র আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন।
আন্দোলনকারী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাসুদুল হোসেন জানান, কোটা সংস্কারের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে তাদের একটি সংবাদ সম্মেলন ছিল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে। সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছাত্রলীগ তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছেন।
এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। পরে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। আন্দোলনকারীরা এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিলও করে। কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপন এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।