আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচন করছি : বুলবুল
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের মনোনীত প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। তবে ভোট সুষ্ঠু হলে রাজশাহীতে ধানের শীষ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত। নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে দেশে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার এবং বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলনের একটা অংশ হিসেবে নিয়েছি। আর এ কারণে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা না থাকলেও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসব কথা বলেন বুলবুল।
বুলবুল বলেন, ‘বাংলাদেশের সদ্য প্রসূত কোনো শিশুরও এই নির্বাচনের প্রতি আস্থা নেই। এই নির্বাচন কমিশন বুধবার বলেছে, যদি কিছু প্রতিকার করতে চান ওবায়দুল কাদের ও এইচ টি ইমামের কাছে যান। কাজেই বাংলাদেশের ১৬ বছরের যুবক-যুবতীও মনে করে এই নির্বাচন কমিশন খাঁচায় আবদ্ধ একটি নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে যে চোর ডাকাতের আর্বিভাব ঘটেছে, এই দেশকে বিক্রি করার যে প্রক্রিয়া চলছে, বিদেশের কাছে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে এই দেশের ভূখণ্ডকে যে বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে তার প্রতিবাদে আমাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া।’
এ সময় বুলবুল অভিযোগ করেন, ‘রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ আমার পোস্টার পর্যন্ত ছিনতাই করে নিয়েছে। জনগণের কাছে তাদের চেহারা উন্মোচন করতেই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের চেহারা জনগণের কাছে উন্মোচিত হবে। ৭১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত তাদের চেহারা জনগণের কাছে উন্মোচিত হয়েছিল। এর ফলশ্রুতিতে তারা ২১ বছর পালিয়েছিল। এবার ৪২ বছর তারা বাইরে পালিয়ে থাকবে।’
রাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে মহানগর যুবদলের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইটের পক্ষেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে তিনি জমা দেননি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুলবুলের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে মহানগর বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। সে সভায় যুবদল নেতা সুইটের মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বুলবুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহীন শওকত, জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে দলীয় কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে হেঁটে দরগাপাড়ায় হযরত শাহ মখদুম রুপোস (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন বুলবুল।
১৯৯১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটানা ১৬ বছর রাসিকের মেয়র ছিলেন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি কারাগারে থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তাই দলীয় সমর্থন পেয়ে সেবারই প্রথমবারের মতো মেয়র পদে লড়াইয়ের সুযোগ পান সেই সময়ের মহানগর যুবদলের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে সে নির্বাচনে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে পরাজিত হন। পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালের নির্বাচনে লিটনকে পরাজিত করে মেয়র হন বুলবুল।
কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় বুলবুল মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হন একাধিকবার। দুই দফায় জেল খাটেন প্রায় ছয় মাস। পাঁচ বছরের মধ্যে সব মিলিয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র ২৬ মাস। আগামী ৩০ জুলাইয়ের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে গতকাল বুধবার তিনি মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
রাজশাহী সিটিতে এবার মোট ভোটার তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন ও নারী ভোটার এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৭টি।