গাজীপুরে ভোটকেন্দ্রে দলবাজ পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে : রিজভী
গাজীপুর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে বাছাই করা দলবাজ পুলিশদের নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আজ সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ অভিযোগ করেন।
বিএনপি নেতা আরো বলেন, ‘খুলনা মার্কা নয়, গাজীপুরে ভোট ডাকাতির সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়তে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আগামীকাল গাজীপুর সিটি করপোরেশনে যে ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানে জনগণ অবাধে পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে এমন কোনো পরিবেশ এখনো দৃশ্যমান নয়। জনগণের মধ্যে ভোট নিয়ে উদ্বেগ ও আশঙ্কা আরো গভীরতর হচ্ছে। গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ ও অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন পর্যন্ত যতটুকু খবর আমাদের কাছে এসেছে তাতে গাজীপুরে বাছাই করে করে দলবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের বিশ্বাস, সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসবেন। ভোট যদি কিছুটা সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, তাহলে ধানের শীষের বিজয় ঠেকাতে পারবে না।’
রিজভী আরো বলেন, ‘কয়েক দিন আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, গাজীপুরে খুলনার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। তার মানে খুলনায় নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট সন্ত্রাসের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁর বক্তব্যে সেটিই প্রমাণিত হলো এবং এই ভোট কারচুপি ও অনিয়ম কমিশন ঠেকাতে পারেনি।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মেসেজ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই উক্তিটিতে সেই প্রবাদটি মনে পড়ে, ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাইনি। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সর্বত্র সরকারের মেসেজ প্রতিপালিত হচ্ছে অক্ষরে অক্ষরে। প্রতিটি লোকালয়ে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির কাজ খুব সুচারুভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।’ তিনি আরো বলেন, ‘পাইকারি হারে গ্রেপ্তার, বাসায় বাসায় তল্লাশি, বিভিন্ন কেন্দ্রে ধানের শীষের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দকে আটক, নতুন করে মিথ্যা মামলায় হয়রানি, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে আসা ডিবি পুলিশের হানাদারি আগ্রাসন, সরকারি দলের মেয়র, মন্ত্রী ও নেতাদের নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গসহ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পুলিশের গাড়িতে করে প্রচারাভিযান ইত্যাদি ঘটনায় সরকারের মেসেজটা কী, তা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটারদের বুঝতে বাকি নেই।’
ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় থাকতে পছন্দ করে না, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা থেকে সরে যেতেও পছন্দ করে না। এ জন্য রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দখলে রাখা প্রয়োজন মনে করে। সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে দলীয় চেতনার লোক নিয়োগ দিয়ে কর্তৃত্ব সম্প্রসারণের কাজটি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী সরকার।’
এ সময় বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারের হিংসা ও বিদ্বেষের শিকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নিম্ন আদালত যদি ন্যায়বিচার করতেন, তাহলে তাঁকে সরকারের বিদ্বেষের শিকার হয়ে কারাগারে বন্দি অবস্থায় নির্মম যন্ত্রণার মধ্যে বসবাস করতে হতো না। বিনা চিকিৎসায় কারাগারে বন্দি জীবন কাটাতে হতো না। সরকারের নির্দেশেই নিম্ন আদালত বেগম জিয়াকে কষ্ট দিতেই অন্যায়ভাবে সাজা দিয়েছে। যাতে সরকার দেশনেত্রীর জীবনকে নানাভাবে সংকটাপন্ন করতে সুযোগ পায়।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ।