গাজীপুরে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মালামাল বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়। আজ শনিবার সকাল থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশনের ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের জন্য এসব সরঞ্জাম গুছানোর কাজ শুরু করেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামের দ্বিতীয় তলায় তারা নির্বাচনী সরঞ্জামগুলো পৃথক ব্যাগে করে প্রস্তুত করছেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জামগুলো এসে পৌঁছেছে। সিটি করপোরেশনের ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রে এ সব নির্বাচনী সরঞ্জাম সোমবার থেকে পাঠানো শুরু হবে। ভোট কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব সরঞ্জাম কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, নির্বাচনী সরঞ্জামের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক সরবরাহ করা হয়েছে সিলসহ স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, অমোচনীয় কালির কলম, রাবারের অফিসিয়াল সিল (কোড বা গোপন চিহ্ন সম্বলিত), রাবারের মার্কিং সিল (ভোটার কর্তৃক ব্যালট পেপার চিহ্নিতের জন্য), গালা, সিলগালা করার জন্য পিতলের সিল (ব্রাস সিল), স্ট্যাম্প প্যাড, চটের বা গানি ব্যাগ (ভোট কেন্দ্রের নির্বাচনী সরঞ্জাম বহনের জন্য) ও চটের ছোট থলি বা হোসিয়ান ব্যাগ। এসব ব্যাগে অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, পিতলের সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, অমোচনীয় কালির কলম ইত্যাদি ভর্তি করে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আলাদাভাবে ফেরত দেবেন। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে বল পয়েন্ট কলম, সাদা কাগজ, কার্বন কাগজ, ছুরি, সুঁই (বড় সাইজ), সুতা, মোমবাতি, দিয়াশলাই, আলপিন, গামপট, সুপার গ্লু, লোহা/প্লাস্টিক/ বাঁশের পাত এবং প্রিন্ট করা দেয়ালপত্র যাতে প্রবেশ, বাহির, ভোটকক্ষ নম্বর, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট ইত্যাদি লেখা থাকবে।
আজ রোববার দিবাগত রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণাও শেষ পর্যায়ে। নির্বাচনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএপির মাঝেই মূলত প্রতিদ্বন্দিতা হবে। অপর দলের প্রার্থীরাও নির্বাচনের মাঠে তাদের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে দেখতে চায়।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ৩১ মার্চ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট গত ৬ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেয়। এতে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচনী সব ধরনের কার্যক্রম। পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন। শুনানি শেষে ওই স্থগিতাদেশ স্থগিত করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আদেশ দেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৬ জুন মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে দ্বিতীয় দফায় ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী প্রার্থীরা আজ ১৮ জুন থেকে এ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে ছয়জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১।