এনায়েতপুরে আবার নদী ভাঙন
সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ এনায়েতপুরে আবারও তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের বৃহৎ কাপড়ের হাট, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, আঞ্চলিক সড়কসহ পাঁচটি গ্রামের প্রায় ২৭ হাজার ঘরবাড়ি ও তাঁত কারখানা।
এদিকে ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এলাকাবাসী দ্রুত ভাঙনরোধে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত তিনদিনের ব্যবধানে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি চর ও জালালপুরের অন্তত ৫৫টি ঘরবাড়ি, নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাহ্মণগ্রাম কবরস্থান, মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ বহু ফসলি জমি যমুনার গর্ভে চলে গেছে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পশ্চিম তীরে অবস্থিত এনায়েতপুর থানা সদরের ব্রাহ্মণগ্রাম-আড়কান্দি থেকে পাচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের সবচেয়ে বড় কাপড়ের হাট, সিরাজগঞ্জ-পাচিল আঞ্চলিক সড়ক, তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ মাঠসহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া নদীর তীরে অবস্থিত পাঁচটি গ্রামের অন্তত ২৭ হাজার ঘরবাড়ি ও কয়েকশ একর আবাদি জমি হুমকির মুখে রয়েছে।
এদিকে নদী ভাঙন দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্তের মানুষ আসছে। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ভাঙনরোধে নেওয়া হয়নি কার্যকর ব্যবস্থা- এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। ভাঙনরোধে পদক্ষেপ না নিলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী এনায়েতপুরের বহু স্থাপনা। এ ঘটনায় তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
আজ বুধবার সকালে ব্রাহ্মণগ্রাম ও আড়কান্দি চরে গিয়ে জানা গেছে, যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো জলিল সরকার, আবুল কাশেম, জমিলা বেগম, হাওয়া খাতুন ও নার্গিস খাতুনের বাড়িসহ প্রায় ৫৫টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় ফলদ ও কাঁঠ বাগান নদীতে বিলীন হয়েছে।
আড়কান্দি চরের বাসিন্দা এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম শামীম হক জানান, নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় ঈদের পর থেকে যমুনা রুদ্ররূপ ধারণ করেছে। প্রবল স্রোতে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে প্রতিদিনই বিশাল বিশাল এলাকা দেবে যাচ্ছে। সবাই ঘরবাড়ি সরানো নিয়ে ব্যস্ত। ঈদের কোনো আনন্দ এদের মধ্যে নেই।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সোহরাব আলী বলেন, গত বছর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও পাউবো কর্মকর্তারা নদী ভাঙন পরিদর্শনে এসে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এর কোনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এলাকাবাসী ত্রাণ নয়, এখন তীর রক্ষা বাঁধ চায়।
এ বিষয়ে খুকনী ইউপি চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ মিয়া ও জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজি সুলতান মাহমুদ বলেন, যমুনার রাক্ষুসী থাবা এক সপ্তাহ স্থায়ী হলে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি চর ও জালালপুরের বিশাল এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এখনই ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষা, চিকিৎসা ও তাঁত শিল্পের এলাকার শত শত মানুষকে সম্বল হারিয়ে পথে বসতে হবে।
যোগাযোগ করা হলে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুসাইন খাঁন বলেন, এনায়েতপুরের নদী ভাঙনের বিষয়ে পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ভাঙনের ভয়াবহতা রোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করছি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পাউবো।