কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত
কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হয় ঈদুল ফিতরের জামাত। জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। জামাত শেষে বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত শোলাকিয়া মাঠে এ বছর অনুষ্ঠিত হয় ১৯১তম ঈদের জামাত।
এবারের জামাতে চার লাখেরও বেশি মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন বলে জানান ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ।
জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহে সকাল থেকেই ঢল নামে মুসল্লিদের। কয়েক ঘণ্টার জন্য আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঈদ জামাতে দূর দূরান্ত থেকে মুসল্লিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয় সরকারিভাবে। এর একটি ট্রেন ভোর সাড়ে পাঁচটায় ময়মনসিংহ থেকে এবং অপর ট্রেনটি সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে শোলাকিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। দুপুর ১২টায় মুসুল্লিদের নিয়ে ট্রেন দুটি আবার ফিরে যায়।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও বিপুল সংখ্যক মুসল্লি জামাতে অংশগ্রহণের জন্য একদিন আগে থেকেই কিশোরগঞ্জ এসে শোলাকিয়া ময়দানসহ পার্শ্ববর্তী মসজিদ ও গেস্ট হাউজগুলোতে অবস্থান গ্রহণ করেন।
২০১৬ সালে ঈদুল ফিতরে রক্তাক্ত জঙ্গি হামলার পর এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নেওয়া হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সহস্রাধিক পুলিশ, পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
মাঠের প্রবেশ পথসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়কে স্থাপন করা হয় সিসি টিভি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। জামাতে আগত মুসল্লিদের ‘মেটাল ডিটেক্টর’ দিয়ে তল্লাশি করা হয়। এ ছাড়া মাঠে ঢুকতে হয় ‘আর্চওয়ে’ দিয়ে। জায়নামাজ ছাড়া অন্য সবকিছু বহন নিষিদ্ধ ছিল।
নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে আরো নিশ্ছিদ্র করতে এবার প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয় ড্রোন। নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির জন্য দুটি ড্রোন উড়িয়ে শোলাকিয়ায় মাঠ ও এর আশপাশের এলাকা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
জানা যায়, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সনে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ।’ সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠে। সাধারণ মুসল্লিদের বিশ্বাস, বেশি লোক একসঙ্গে নামাজ আদায় করলে করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। ওই কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করতে আসেন।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের অদূরে আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে পুলিশ সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় পুলিশের দুই সদস্য, এক জঙ্গি ও বাড়ির ভেতরে থাকা এক নারীসহ চারজন নিহত হয় এবং আট পুলিশসহ তিন পথচারী গুরুতর আহত হয়।