বিএনপি নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের বাকি আর কিছু সময়। বরাবরই ঈদ নিয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দেয়। শীর্ষনেতারা কুশলাদি বিনিময় করেন দলের নেতাকর্মী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও কূটনৈতিকদের সঙ্গে।
মাঠ পর্যায়ের নেতারা চলে যান গ্রামে তৃণমূল মানুষের কাছে। বিএনপির রাজনীতিতে এবার আর সেই মাত্রা নেই। দলের শীর্ষ নেত্রী কারাগারে। এ কারণেই দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে হাসিখুশি নেই। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা জানা গেছে।
বিএনপি নেতাদের মতে, এবারের ঈদে সেই প্রাণচাঞ্চল্যতা আর আবেগ নেই। দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি আছেন। তার উপর তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাই বিএনপি নেতাকর্মীরা অন্যবারের মতো হাসি-আনন্দে ঈদ উদযাপন করতে পারছেন না।
অন্যান্য বছর ঈদের দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিদেশি কূটনীতিক, দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পোশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রতিবছর দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের। এবার আর তা হচ্ছে না। তবে নেত্রীর অনুপস্থিতিতে এবার ঈদের নামাজের পর পরই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন নেতাকর্মীরা।
এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা পুরানো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের গণমাধ্যম শাখার সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় বিএনপির অনেক নেতা নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন।
তবে এবারের ঈদুল ফিতরে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকায় ঈদ করবেন।
এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাঁর নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী, স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য তরিকুল ইসলাম নিজ এলাকা যশোরে ঈদ করবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন, বেগম সেলিমা রহমান, শওকত মাহমুদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শাহ মোয়াজ্জম হোসেন ঈদ করবেন ঢাকায়।
অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বরিশালে এবং শামসুজ্জামান দুদু নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গায় ঈদ করবেন। আলতাফ হোসেন চৌধুরী নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে, এম মোর্শেদ খান ও মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন তাদের নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন। ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা চিকিৎসার জন্য আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে, সপরিবারে তিনি সেখানেই ঈদ উদযাপন করবেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঈদের দিন থাকছেন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। আরেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী আছেন কারাগারে। যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঈদ করবেন ঢাকায়। এ ছাড়া মজিবুর রহমান সরোয়ার বরিশালে, খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী ও হারুন-অর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঈদ করবেন।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহে এবং ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ফরিদপুরে ঈদ করবেন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরে এবং বিলকিস জাহান শিরিন, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন নিজ নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করবেন।
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে শরিফুল আলম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান শামীম তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
খালেদা জিয়া ছাড়াও কারাগারে ঈদ করবেন বিএনপির দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আজিজুল বারি হেলাল, লুৎফুজ্জামান বাবর, হাবীবুর রশিদ হাবীব, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান। বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও কারাগারে ঈদ উদযাপন করবেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল ঢাকাতে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম এবারও মালয়েশিয়াতে ঈদ করবেন।
বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ অনেকেই ঢাকায় ঈদের নামাজ পড়ে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাবেন।
এ ছাড়া মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ঈদের দিন থাকছেন ঢাকায়।