খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে ড্যাবের উদ্বেগ
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগারে অচেতন হয়ে পড়ে যাওয়ার খবরে সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। রোববার বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠনটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অসুস্থ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের এ আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গর্হিত অপরাধ। গত ৫ জুন খালেদা জিয়া মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন এবং পাঁচ থেকে সাত মিনিট অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ শনিবার তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তাঁর মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছিল যা পরবর্তীতে মারাত্মক পরিণতির দিকে যেতে পারে। তাই দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তাঁর জন্য সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম লিখিতপত্র পেশ করেছেন।
ড্যাবের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের পক্ষে সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের এক যৌথ বিবৃতিতে এসব জানানো হয়।
খালেদা জিয়াকে প্রায় চার মাস আগে দাবিকৃত মিথ্যা প্রমাণহীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। পরিত্যক্ত ও যে কোনো মানে বসবাসের অযোগ্য কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সাথে তুলনীয় নির্জন কারাগারে তিনি যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁর প্রতি ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে এবং একে এক গভীর ও সুদূর প্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসাবে পরিগণিত করছে। খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ। বয়সজনিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত একজন বর্ষিয়ান নারীর এই নির্জন মানবেতর কারাবাস স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে তা শুরু থেকেই সাধারণ মানুষকেও গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল। তাঁর ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, কিডনি ও মূত্রথলির সংক্রমণ, হাঁটু ও সন্ধির প্রদাহসহ নানা রোগের যে একান্ত পরিচর্যা প্রয়োজন ছিল এই নির্জন, সূর্যালোকহীন, স্যাঁতস্যাঁতে পরিত্যক্ত, পোকা-মাকড় বিচরিত কারাগারে এই ধরনের (চিকিৎসকদের পরিভাষায়) একজন বিশেষ পরিচর্যা সাপেক্ষ রোগীর সেবা প্রদান এক রকম অসম্ভব।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা চিকিৎসক হিসেবে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে ইতোপূর্বে সংবাদ মাধ্যমের বরাতে সংশ্লিষ্ট সবার এই গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করেছি। দুর্ভাগ্য যে, কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব আরোপ না করে গা-ছাড়া আচরণ প্রদর্শন করে আসছে যা অবহেলার শামিল হয়ে উঠেছে। চিকিৎসা ও যথাযথ পরিচর্যার অভাবে এমন একজন গুরুতর অসুস্থ রোগীর সাধারণ পরিণতিতে যা হবার খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। গত ৫ জুন তিনি প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ভোগা অবস্থায় হঠাৎ করে জ্ঞান হারান ও মাটিতে পড়ে যান। তাঁর অন্যান্য রোগ-উপসর্গেরও অবনতি ঘটেছে। তিনি প্রবল ব্যথা ও ভারসাম্যহীনতা আক্রান্ত হয়ে ক্রমশ চলৎ-শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। ফলে তিনি এখন আর নির্দিষ্ট সাক্ষাৎকার কক্ষে এসে আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করতেও পারছেন না। দিনের পর দিন তিনি বিদ্যুৎহীন পরিবেশে নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন, পোকা-মাকড়ের কামড়ে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছেন। তিনি পুষ্টিকর খাবারের অভাবে দুর্বল ও পুষ্টিহীন হয়ে পড়েছেন। বিষয়গুলো তাঁর সাথে সম্প্রতি সাক্ষাৎ করে আসা পারিবারিক সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সৌভাগ্যবশত এ যাত্রায় তিনি মস্তিষ্ক, উরুসন্ধি ও মেরুদন্ডের ভয়ংকর আঘাত এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো প্রাণনাশী জটিলতা থেকে সামান্যর জন্যে রক্ষা পেয়েছেন।
এমন একটি আশংকা বহু আগেই করা হয়েছিল ও সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল। কারা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবজ্ঞায় এখন তা বাস্তবে পরিণত হলে। আমরা আরো আশংকা ব্যক্ত করেছিলাম যে এ ধরনের বিপর্যয় বেগম খালেদা জিয়ার অন্ধত্ব ও নানাভাবে পঙ্গুত্ববরণসহ জীবনের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। এই ঘটনা কারা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয় অবস্থা সে পরিণতির ঝুঁকিকে আরো সম্ভাব্য করে তুলেছে। বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত করে যে কারা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর যথাযথ চিকিৎসা ও পরিচর্যা বিষয়ে যুগপৎ উদাসীন ও অপারগ। এ ক্ষেত্রে আইনের বিধানের আনুকূল্য গ্রহণ করে মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন হিসাবে তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করে তাঁর চিকিৎসার বিষয়টিকে নিজের ওপর ছেড়ে দিয়ে আইনের শাসনে আস্থা ফিরিয়ে আনা ও মানবিক আচরণ প্রদর্শনের যে বিরল সময় এখন উপস্থিত হয়েছে আমরা বিশাস করতে চাই সরকার তার সুযোগ নিয়ে রাজনীতিতে প্রতিহিংসা বর্জন ও সৌজন্য প্রদর্শণের কৃষ্টি সংহত করবে।
বিজ্ঞতিতে বলা হয়, আমরা আশা করি সরকার বিষয়টিতে সচেতন হবে এবং অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকারকেই বহন করতে হবে।