‘১৪ জুনের মোট টিকেট ২৭ হাজার ৪৬১টি। আর এখানে টিকেট নিতে মানুষ এসেছেন কমপক্ষে ৭০ হাজার। আমার দেখা, এ যাবত কালের সবচেয়ে বেশি মানুষ আজ স্টেশনে এসেছেন! আগে কখনো আমি এত মানুষ দেখিনি স্টেশনে।’

রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী এনটিভি অনলাইনকে এসব কথা বলেন। তিনি যখন এসব কথা বলছিলেন তখন ঘড়িতে সকাল ৯টা। আজ মঙ্গলবার কমলাপুরে ছিল উপচে পড়া ভিড়। আজ দেওয়া হয় ১৪ জুনের টিকেট।

সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের প্রবেশদ্বারের পাশে রুপালি ব্যাংক থেকে লাইন শুরু হয়েছে। যা টিকেট কাউন্টারে গিয়ে শেষ হয়। কেউ কেউ, গরমে, ক্লান্তিতে মাটিতে পত্রিকা পিছিয়ে বসে পড়েছে। আবার অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছে।

জানা যায়, এসব টিকেট প্রত্যাশী মানুষের কেউ এসেছেন গতকাল বিকেলে, কেউ সন্ধ্যায়, রাতে কিংবা সকালে। অতিরিক্ত ভিড় দেখে সকালে আসা অধিকাংশ মানুষই লাইনে দাঁড়ায়নি। ফিরে গেছে কেউ কেউ।

এদিকে সকাল ১১টার সময়ই কোন কোন কাউন্টার থেকে টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। অভিযোগ নিয়ে স্টেশন ম্যানেজারের কাছে গেলে তিনি নিরুপায় ভঙ্গিতে বলছেন,‘আমার কিছু করার নেই’।

স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী এনটিভি অনলাইনকে বলেন,‘আগে কখনো আমি এত মানুষ দেখিনি স্টেশনে। তাহলে বলেন টিকেট কীভাবে দেব সবাইকে? আমাদের স্বল্প সংখ্যক জনবল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এজন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে টিকেট প্রত্যাশীদের। মোট ২৬টি কাউন্টার থেকে টিকেট দেওয়া হচ্ছে। এর ভেতরে তিনটি কাউন্টারে নারীদের টিকেট দেওয়া হচ্ছে। বাকি ২৩টি কাউন্টার থেকে পুরুষদের টিকেট দেওয়া হচ্ছে।’

যারা সারারাত টিকেটের জন্য অপেক্ষা করে ফিরে যাচ্ছেন,তাদের কী হবে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,‘কিছু তো করার নেই। একদিন বা দু’দিন পরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

এদিকে টিকেট বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন একাধিক মানুষ। লাইন ভেঙ্গে আগে চলে যাওয়া,স্বজনপ্রীতি, কিংবা কিছু টাকা দিয়ে লাইনের আগে চলে যাওয়ার ঘটনা জানা যায়।

আবার বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে দেওয়া অগ্রিম টিকেটের চাহিদাপত্র থাকা সত্ত্বেও টিকেট পেতে দেরি বা নির্ধারিত সিরিয়ালে টিকেট না দেওয়ার অভিযোগও করেন অনেকেই। কেউ আবার চাহিদাপত্র থাকা সত্ত্বেও টিকেটই পাননি।

আল আমিন নামের এক টিকেট প্রত্যাশী ব্যক্তি যাবেন জামালপুরে। তিনি টিকেট নিতে একটি অগ্রিম চাহিদাপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। ‘সিরিয়াল’ হওয়ার পরও তিনি টিকেট না পেয়ে স্টেশন ম্যানেজারের কাছে গিয়ে অভিযোগ দেন।

আল আমিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন,‘সব জায়গায় অনিয়মে ভরা। ১৩৫ নম্বর সিরিয়াল আমার। অথচ আমি টিকেট পেলাম না। এসেছি গতকাল সন্ধ্যায়। সারারাত পরে যদি শুনি আমার জন্য নির্ধারিত টিকেট শেষ তখন কেমন লাগে?’

রাতভর অপেক্ষা করে টিকেট না পেয়ে হতাশা নিয়ে স্টেশন ছাড়ছেন কেউ কেউ। আবার টিকেট হাতে পেয়ে অনেকে আনন্দে উল্লাস করছেন। ছবি তুলতে চাইলেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন ক্যামেরার সামনে।

রামিম হাসান নামের একজন টিকেট হাতে পেয়ে উল্লাস করতে করতে বলেন, ‘এর চেয়ে ভালো লাগার আর কিছু নেই।’

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে গত ১ জুন থেকেই শুরু হয়েছে অগ্রিম টিকেট বিক্রি।