প্রচার শুরুর আগেই প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) এবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬ জুন। ভোট গ্রহণের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকসহ সবার মাঝে ক্রমেই বাড়ছে উত্তাপ ও ব্যস্ততা। নির্বাচনে বিজয়ী হতে প্রার্থীরা ক্রমেই মরিয়া হয়ে উঠছেন।
নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু না হলেও প্রার্থীরা এক মুহূর্ত সময় নষ্ট অর্থাৎ অপচয় না করে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে প্রতিদিনই কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের খোঁজে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের বিভিন্ন এলাকায় নানা কৌশলে ছুটছেন ও নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। বসে নেই প্রার্থীদের স্বজনরাও। বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন এবং নিজ দলীয় প্রার্থীর জন্য ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী (নৌকা) অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকার এবং তাঁদের কর্মী-সমর্থকরা প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকায় নানা কৌশলে প্রচার চালাচ্ছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে মোট সাতজন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মনোনীত দুই প্রার্থীর মধ্যে।
সোমবার আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম মহানগরের ১০, ৪৪ ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে অনুষ্ঠিত পৃথক আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলে অংশ নেন এবং বক্তব্য দেন।
জাহাঙ্গীরের পক্ষে ভোট চাইলেন মন্ত্রী
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মেজাম্মেল হক সোমবার বিকেলে মহানগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কোনাবাড়ী আমবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আলোচনা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলে যোগ দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. আক্কাছ আলী।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়তে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মহানগরীর ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর পূর্বপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত ইফতার পূর্ব আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। কাউন্সিলর মো. মাজহারুল ইসলাম দীপু এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি গড়তে চান জাহাঙ্গীর
সভায় মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি গাজীপুরকে গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, গাজীপুর সিটির এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আমি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টঙ্গী এলাকার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা, যানজট, শিশুদের জন্য বিনোদন পার্ক, শ্রমিকদের আবাসন সমস্যা, তুরাগের দূষিত পানি, সরু এবং ভাঙাচোরা রাস্তার সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেব। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সব কার্যক্রম স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত রাখব। এ সময় তিনি আগামী ২৬ জুন নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সবার সমর্থন ও সহযোগিতা চান।
এর আগে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের মরকুন কবরস্থান মসজিদ প্রাঙ্গণে এবং টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় মাইক্রোবাস মালিক সমিতি আয়োজিত আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলে মুসল্লিদের কাছে দোয়া ও সমর্থন চান।
এ সময় অন্যদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের মো. নাদের আলী, মো. আসাদুল্লাহ, মো. সরবেশ আলী, আবদুর রহমান মাস্টার, মো. খলিলুর রহমান, কাজী ইলিয়াস আহমেদ, মো. জয়নাল আবেদীন, মো. ফজলুল হক, মো. রজব আলী, মো. মতিউর রহমান মতি, কাউন্সিলর মো. আসাদুর রহমান কিরণ, মো. হেলাল উদ্দিন, আজমেরী খান টুটুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে উন্নয়ন ঘটাবেন হাসান সরকার
এদিকে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকের হাসান উদ্দিন সরকার সোমবার সকালে টঙ্গীস্থ তাঁর বাসায় কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও বৈঠক করেন। দুপুরে তিনি মারিয়ালী এলাকায় সাবেক ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুল লতিফ মেম্বারের জানাজায় শরিক হন। বিকেলে টঙ্গীর মিলগেটে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন।
এ সময় বক্তব্য কালে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমি এলাকাবাসীর জন্য কিছু করে যেতে চাই। আমি মেয়র পদে নির্বাচিত হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন করব আমার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও সততা দিয়ে। আমি লাঠি দিয়ে লড়াই করব না। জ্ঞান দিয়ে লড়াই করব।’
প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থীর উদ্দেশে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আপনাদের সরকারের সময় আপনি তো উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এলাকার উন্নয়ন তো দূরের কথা কোথাও এক টুকরি মাটি ফেলেছেন তা দেখাতে পারবেন? দীর্ঘ পাঁচ বছর ভাইস চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় আপনি এলাকার কোনো উন্নয়ন করেননি। করেছেন কলখারখানায় ঝুটের ব্যবসা। আমাদের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করেছেন। যাদের এখন সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা আমাদের জন্য কষ্টকর হবে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, গাজীপুরে বিএনপি ও সরকার পরিবারের হাত থেকে কেউ ভোট ছিনিয়ে নিতে পারবে না। তিনি বলেন, ভোট আমাদের, ময়দান আমাদের। এই নির্বাচনে আমাদের জিততেই হবে।
এ্যানী আরো বলেন, জাল ও ভুয়া তথ্য দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনকে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। সরকার যে উদ্দেশ্যে তাঁকে কারাগারে বন্দি রেখেছে তাদের সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। কোনো অবস্থাতেই খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, স্বেচ্ছাসেবকদলের কেন্দ্রীয় নেতা আরিফ হোসেন হাওলাদার, টঙ্গী থানা বিএনপির সহসভাপতি মজিবুল হক দুলাল, সহসভাপতি আবুল হাসেম, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সেলিম হোসেন, ইমান আলী সরকার প্রমুখ। ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. শরিফ মিয়ার সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন টঙ্গী থানা বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক জামাল উদ্দিন।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন। এদের মধ্যে ছয়জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের পুনঃঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ২৬ জুন দেশের বৃহত্তম গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে ১৮ জুন থেকে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন ও নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন।