বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার তদন্ত হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনায় তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা ঘটনারই তদন্ত হবে। এটার নির্বাহী তদন্ত হবে। অযৌক্তিক বা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা হলে সেটার নির্বাহী তদন্ত হবে।’
তবে দেশে বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড হচ্ছে না বলে দাবি করেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, ‘দেশে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আত্মরক্ষার স্বার্থে গুলি চালায়। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আহত হন, মাদক ব্যবসায়ীরাও মারা যান। ওই অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিকল্প কিছু করার নেই। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ার মধ্য দিয়ে মাদক নির্মূল করব। যেকোনো মূল্যে আমাদের মাদকমুক্ত করতে হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের সরকার যেকোনো হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে। আমরা কাউকে হত্যা করছি না। প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন কেউ যাতে অন্যায়ের শিকার না হয়। আমরা সেগুলো পুঙ্খনুপুঙ্খভাবে পালন করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন অভিযান চালায়, তারা অনেক সতর্ক থাকে। সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে আক্রমণ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তখন আত্মরক্ষার্থে তাদের বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে। যেখানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বা নিহত হচ্ছে, আমরা প্রত্যেকটি ঘটনারই তদন্ত করছি। কয়েকটি সংস্থা তদন্ত করছে।’
জোসেফ বাহিনীর প্রধান জোসেফকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আমার জানা মতে জোসেফের সাজা হয়েছিল ২০ বছর। কিছু অর্থদণ্ডও হয়েছিল। ইতিমধ্যেই তার সাজার মেয়াদ প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। অল্প কিছুদিন বাকি আছে। রাষ্ট্রপতির কাছে সে ক্ষমার আবেদন করেছে। অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তার ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করেছে বলে আমি শুনেছি।’
এর আগে বার্নিকাটের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতদের নিয়েও কথা হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মার্শিয়া বার্নিকাট। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মাদকবিরোধী অভিযানে যারা নিহত এবং আটক হচ্ছে, তাদের প্রত্যেকেরই আইনি সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। বিনাবিচারে একটা লোক মারা যাওয়ার অর্থ হলো একটি পরিবার শেষ হয়ে যাওয়া। মাদক কারবারের সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত তাদের আইনের আওতায় না এনে, মাদকের উৎস বন্ধ না করে এই মাদকবিরোধী অভিযান থেকে সাফল্য আসবে না। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সরকার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার) ও বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরাও এই কথাগুলো বলে আসছেন। মাদকমুক্ত সমাজ গড়া সবার অঙ্গীকার। কিন্তু সেইটা হতে হবে আইনি প্রক্রিয়ায়।’
সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে গত ১৬ দিনে অন্তত ১২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এ ছাড়া এই পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে। এসব মৃত্যুকে ‘বিচারবহির্ভূত ক্রসফায়ার’ বলে সমালোচনা করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
তবে সরকার দলীয় লোক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব ঘটনাকে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বলে দাবি করে আসছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘কোনো ক্রসফায়ার হচ্ছে না, যা হচ্ছে তা বন্দুকযুদ্ধ।’
এ ছাড়া বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও কথা হয়। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাপ অব্যাহত রাখবে বলে বৈঠকে মার্শা বার্নিকাট জানান।