‘বন্দুকযুদ্ধ’ চলছে, গত রাতে ১২ ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত
মাদকবিরোধী অভিযানের সময় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনা বেড়েই চলেছে। গতকাল রোববার রাতেও রাজধানীসহ দেশের সাত জেলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী।
এর মধ্যে সাতক্ষীরায় দুজন, পিরোজপুরে দুজন, কুমিল্লায় দুজন এবং রাজধানী, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, ঝিনাইদহ, পাবনা ও চাঁদপুরে একজন করে নিহত হয়েছেন।
এ নিয়ে গত ১৪ দিনে ৯৬ জন নিহত হয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :
সাতক্ষীরা থেকে সুভাষ চৌধুরী জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা সড়কের বাঁকালের পাশের আগুনপুর গ্রামে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, তাঁরা মাদক ব্যবসায়ী।
সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রবীর কুমার দাস দাবি করেন, আজ সোমবার ভোরে খবর আসে যে, বাঁকালের পাশে আগুনপুরে দুটি লাশ পড়ে রয়েছে। পুলিশ সেখানে যায়। লাশ দুটির প্রত্যেকের দেহে একটি করে গুলির চিহ্ন রয়েছে। পাশেই পাওয়া গেছে একটি ওয়ানশুটার গান ও ১০৫ বোতল ফেনসিডিল। এ ছাড়া মদের খালি বোতলও পাওয়া গেছে।
উপপরিদর্শক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাদকের ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলির একপর্যায়ে দুজন নিহত হন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
পিরোজপুর থেকে রশিদ আল মুনান জানিয়েছেন, পিরোজপুর সদর ও মঠবাড়িয়া উপজেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
গতকাল রোববার মধ্যরাতে নিহতরা হলেন সদর উপজেলায় অহিদুজ্জামান অহিদ এবং মঠবাড়িয়া উপজেলায় মো. মিজান। অহিদুজ্জামান নেছারাবাদ উপজেলার দক্ষিণ কৌড়িখারা সোহাগদল গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে আটটি মাদক মামলা রয়েছে। তিনি একটি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। অপরদিকে মিজানের বাড়ি মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নে। তাঁর বিরুদ্ধেও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ দাবি করেছেন, গতকাল রোববার দুপুরে অহিদুজ্জামান অহিদকে পিরোজপুরের কৃষ্ণনগর এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে তাঁকে নিয়ে মাদক উদ্ধারের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল কলাখালী ইউনিয়নের কৌবত্তখালী গ্রামে অভিযানে যায়। সেখানে অহিদকে তাঁর সহযোগীরা পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালালে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে অহিদুজ্জামান গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো দাবি করেছেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, দুটি দা, পাঁচটি কার্তুজ ও ১৭৫টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সরোয়ার দাবি করেন, উপজেলার বড় মাছুয়া ইউনিয়নে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিজান নিহত হয়েছেন। এ সময় মঠবাড়িয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাজাহারুল ইসলামসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে দেড় কেজি গাঁজা, ৬০টি ইয়াবা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
কুমিল্লা থেকে মো. জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, জেলার দেবীদ্বার ও সদর দক্ষিণ থানা এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন, দেবীদ্বারের ভিংলাবাড়ীর এনামুল হক ভূইয়া ওরফে দুলাল ভূইয়া ওরফে দুলন এবং সদর দক্ষিণ থানার নূরু মিয়া ওরফে নূরু হুজুর। এনামুলের বিরুদ্ধে ১৩টি এবং নূরুর বিরুদ্ধে ১২টি মামলা ছিল।
দেবীদ্বার থানার ওসি মিজানুর রহমান ও সদর দক্ষিণ থানার ওসি নজরুল ইসলাম দাবি করেন, চোরাকারবারিরা মাদক পাচার করছে—এমন খবরে পুলিশ সদস্যরা অভিযানে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তারাও পাল্টা গুলি করে।
পুলিশের আরো দাবি, দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী এনামুল হক ভূইয়া ও নূরু মিয়া নিহত হন। এ সময় আহত হয়েছেন পুলিশের তিন সদস্য, জব্দ করা হয় মাদক ও অস্ত্র।
ঝিনাইদহ থেকে মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, সদর উপজেলার জাড়গ্রামের শ্মশান এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের দুই পক্ষের মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
গতকাল রোববার রাত সোয়া ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছেন ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কনক কুমার দাস।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ দাবি করেছেন, মাদকের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে ওই ব্যক্তি নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগজিনসহ দুটি গুলি, আধা কেজি গাঁজা ও ২০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
ফরিদ জেলা শহরের পাগলাকানাই সড়কের বাসিন্দা।
নাটোর থেকে হালিম খান জানিয়েছেন, নাটোরের সিংড়া উপজেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ খালেক উদ্দিন নামে এক ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর শিবলী মোস্তফা দাবি করেন, উপজেলার ভাগনাগরকান্দি এলাকার একটি বাড়িতে মাদক লেনদেনের খবর পেয়ে রাত ২টায় র্যাব সদস্যরা সেখানে অভিযানে যায়। তখন সন্ত্রাসীরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি করে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়।
এ সময় খালেক গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এতে র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে কিছু মাদকদ্রব্য, একটি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন র্যাব কর্মকর্তা।
ঢাকায় নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, রাজধানী মিরপুরে রূপনগর এলাকায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি (৪০) নিহত হয়েছেন। তিনি মাদক ব্যবসা করতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল রোববার দিবাগত রাতে রূপনগর থানাধীন সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন ভবন এলাকায় ডিবি সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ এ ঘটনা ঘটে।
রূপনগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান-২ জানান, রাত ৩টার দিকে ডিবির কাছে সংবাদ আসে ঘটনাস্থলে মাদক ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছে। এরপর ডিবির একটি দল সেখানে অভিযানে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভোর ৪টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁদপুর থেকে হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আবু সাঈদ বাদশা ওরফে লাল বাদশা নামে এক ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
লাল বাদশা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে ১০টি মাদক মামলা রয়েছে।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ আলম দাবি করেন, গতকাল রাতে ফরিদগঞ্জের গুপ্টি ব্রিজ এলাকায় অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর হামলা ও গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হন লাল বাদশা। তাঁকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১১১টি ইয়াবা, একটি একনলা বন্দুক, চারটি গুলি ও একটি ককটেল উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশের দাবি।
মুন্সীগঞ্জ থেকে মঈনউদ্দিন সুমন জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা কাতলাপাড়া এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সুমন বিশ্বাস ওরফে কানা সুমন নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দীন দাবি করেন, গতকাল রোববার গভীর রাত ২টায় পুলিশের কাছে খবর আসে সুমনের লাশ মুরমা কাতলাপাড়া ব্রিজের সামনে পড়ে আছে। পরে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
সুমন মিরকাদিম পৌরসভার পানির ট্রাংকি এলাকার বাসিন্দা। তাঁর মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৫টি মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
পাবনা থেকে এ বি এম ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, পাবনার বেড়া উপজেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইজ্জত আলী প্রামাণিক (২৭) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি উপজেলার হাঁটুরিয়া নাকালিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
জেলা পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির দাবি করেন, গতকাল রোববার রাত ১টার দিকে একদল ডাকাত রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ডাকাতির চেষ্টা করছিল। টহল পুলিশ সেখানে পৌঁছালে ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এ সময় ইজ্জত আলী গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশের আরো দাবি, ইজ্জত আলী কুখ্যাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, খুনি, চাঁদাবাজ, ডাকাত, অপহরণকারী ও মাদকসম্রাট হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় এসআই সুব্রত কুমার বিশ্বাসসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশি শাটারগান, চারটি গুলিসহ বেশ কিছু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।