হুমকির মুখে মুন্সীগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ, সংস্কারের দাবি
ধলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত মুন্সীগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এখন হুমকির মুখে। শহরের ব্যবসায়ীদের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নদী তীরে চলে এসেছে। ফলে ফাটল ধরে শহর রক্ষা বাঁধ এখন শহরের জন্যে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে।
আজ মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জ শহরে গিয়ে এমনটাই দেখা যায়। আর তাই বাঁধটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছে স্থানীয় জনগণ।
মুন্সীগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, শহর রক্ষা বাঁধটি ২০০৫ সালে তৈরি করা শুরু হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই শহর রক্ষা বাঁধটি মুক্তারপুর সেতুর কাছ থেকে শুরু হয়ে লঞ্চঘাট, রমজানবেগ ও মুন্সিরহাট হয়ে শহর ঘুরে পুনরায় মুক্তারপুর সেতুর কাছে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা। গত বছর বাঁধের মাত্র তিন কিলোমিটার কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এই কাজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩৬ কোটি টাকা। আর এটুকু কাজ প্রায় আটটি প্যাকেজে ছয়জন ঠিকাদার শেষ করেছেন।
এরপর নানা অনিয়মে ও অসদ্ব্যবহারে বাঁধটিতে ফাটল ধরেছে। কিন্তু সংস্কার হয়নি।
জানা যায়, বেড়িবাঁধ এলাকায় বাল্কহেড, বালুর ব্যবসা, ইটের ব্যবসা ছাড়াও নানা কারণে এই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই বাঁধকে কেন্দ্র করে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, মাদ্রাসা, হাটবাজার, বিভিন্ন স্থাপনা এখন হুমকির সম্মুখীন।
স্থানীয় লোকজন জানান, শহর রক্ষা বাঁধের পাশে বালু রেখে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ব্যবসা করে আসছেন। এতে এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের সিসি ব্লকের বেশ কিছু অংশ ধ্বসে যায়। এখন পুরো বাঁধই ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
বাঁধ এলাকার বাসিন্দা পারভীন আক্তার বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তারা এবং জনপ্রতিনিধিরা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেছেন, কাজ আর হয়নি। সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে বাড়ছে আশঙ্কা। বেড়িবাঁধের পাশে অসংখ্য দোকান, বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার এখন ঝুকিতে আছে। তাই সবার কাছে একটাই আবেদন অতি দ্রুত এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তা না হলে নিজেরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। পুরো শহরকে বাঁচাতে চাইলে অতি দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ সংস্কার করা হোক।’
নয়াগাঁও এলাকার জামাল মিয়াঁ বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে তারা রাস্তার সংস্কার কাজের নামে কারচুপি করে। ফলে ভুক্তভোগী হচ্ছে এই এলাকার শতাধিক মানুষ। সংশ্লিষ্টদের কাছে একটাই আবেদন, যাতে অতি দ্রুত এই বিষয়ে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। শহর রক্ষার বাঁধ সংস্কার না করার কারণে রাস্তাটিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
নয়াগাও এলাকার জীবন আহমেদ বলেন, ‘মুক্তারপুর এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখন নদীর তীরে এসে গিয়েছে। একাধিকবার বলা হলেও কাজ হচ্ছে না। বালুর ব্যবসা, ইটের ব্যবসা এগুলো নদীর পাশে না করে দূরে করা উচিত। কেননা, এর ফলে আমাদের নদী তীরবর্তী এলাকা এবং বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে যেমন আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমন আমাদের বসবাসের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
স্থানীয়রা জানান, এই বেরিবাঁধটি তৈরির পর থেকে এই পর্যন্ত কোনো সংস্কার করা হয়নি। বাঁধের সঙ্গে বালু এবং ইট ব্যবসার কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। এছাড়াও মাটি কাটার ড্রেজারের পাইপ ও বিভিন্ন নৌযান ভেড়ানোর কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে,পঞ্চসার ইউনিয়নের মুক্তারপুর সেতুর কাছে ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় বাঁধের ওপর ইট ও বালুর ব্যবসা করছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযান ঘাট থাকা সত্ত্বেও সেখানে না ভিড়িয়ে বাঁধের সঙ্গে ভেড়ানো হয়। এতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ড্রেজারের বালুর পাইপগুলো নদী থেকে বাঁধের ওপর দিয়ে গ্রামের দিকে চলে গেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বলেন, ‘বেড়িবাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাল্কহেডগুলোর বালু লোড-আনলোডের কারণে। আর এই কাজগুলো তারা রাতে করে থাকে। বাঁধটি রক্ষার্থে রাতে পুলিশী নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি বাজেট পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।’