৯ জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে ১১ মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত
সারা দেশে নয় জেলায় তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে গতকাল সোমবার রাতের বিভিন্ন সময়ে ১১ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের সঙ্গে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে কুমিল্লার অরণ্যপুরে দুজন, নীলফামারিতে দুজন এবং নেত্রকোনা, নারায়ণগঞ্জ, ফেনীর লেমুয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, দিনাজপুর, চট্টগ্রামের বায়েজিদে একজন করে মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে আরো দাবি করা হয়েছে, নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী। ‘বন্দুকযুদ্ধের’ সময় অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে প্রতি রাতেই মাদক ব্যবসায়ীরা তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ অভিযান চলবে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সারা দেশে ২২ ব্যক্তি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গত রোববার চারজন এবং গতকাল সোমবার নয়জনসহ মোট ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত ১৫ মে দুজন, ১৭ মে তিনজন, ১৮ মে একজন, ১৯ মে তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার আরো ১১ জন নিহতের খবর এলো।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ২১ দিনে ২৭ ব্যক্তি তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিহতদের মধ্যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হাতে ১০ জন, পুলিশের হাতে আটজন এবং গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে নয়জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-
কুমিল্লা থেকে মো. জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, সদর উপজেলার অরণ্যপুর সীমান্ত এলাকায় তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে দুজন নিহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এরা হলেন শহরের শুভপুরের পিয়ার ও সদর দক্ষিণ থানার চৌয়ারার শরীফ।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে এ বন্দুকযুদ্ধের সময় সেলিম নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তিনি শহরের শুভপুরের বাসিন্দা।
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছালাম মিয়া এবং জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওসি নাছির উদ্দিন মৃধা দাবি করেন, রাতে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ যৌথ অভিযান শুরু করে। অরণ্যপুর সীমান্তে পৌঁছার পর পুলিশকে লক্ষ্য করে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করে। এ সময় ঘটনাস্থলে পিয়ার ও শরীফ নিহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয় সেলিমকে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের আরো দাবি, এ সময় তাদের চার সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, একটি পাজারো গাড়ি, ৫০ কেজি গাঁজা ও ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত দুজনের লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। আর আহত সেলিমকে হাসপাতালের কারা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
নেত্রকোনা থেকে ভজন দাস জানিয়েছেন, সদর উপজেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আমজাদ হোসেন (৩২) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার বড়াইল বালুঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান জুয়েল দাবি করেন, ‘নেত্রকোনা পৌর শহরের পশ্চিম নাগড়া এলাকা থেকে গতকাল গভীর রাতে মাদক ব্যবসায়ী খুন-রাহাজানিসহ ১৫ মামলার আসামি আমজাদ হোসেনকে আটক করে পুলিশ। তিনি ওই এলাকার আলী হোসেনের ছেলে। এ সময় তাঁর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে ৩০০ ইয়াবা ও ৫০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।’
‘পরে আমজাদকে নিয়ে বড়াইলে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে গেলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এ সময় আমজাদ গুরুতর আহত হন। তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো দাবি করেন, এ সময় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বোরহান উদ্দিন, উপপরিদর্শক (এসআই) মকবুল হোসেন, এসআই মহসীন, এসআই আবদুল্লাহ, কনস্টেবল মালেক আহত হন।
ওসি বোরহান উদ্দিনের ভাষ্য এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পাইপগান এবং পাঁচটি কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আমজাদের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা, পাঁচটি মাদক মামলাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে কামরুজ্জামান সাধু নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলা শহরের রেলস্টেশনের পেছনে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেছেন আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ মো. ফখরুল আলম খান।
নিহত কামরুজ্জামান সাধু (৪৫) উপজেলার হারদী গ্রামের মৃত এমদাদুল হকের ছেলে।
‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়ে ওসি আবু জিহাদ মো. ফখরুল আলম খানের ভাষ্য হচ্ছে, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহর নেতৃত্বে আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ বিশেষ অভিযানে বের হয়। পুলিশের গাড়ি আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের কাছে পৌঁছালে হঠাৎ সেই গাড়িতে সন্ত্রাসীরা গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন পড়ে ছিলেন। পরে তাঁকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয়রা এসে কামরুজ্জামান সাধুকে শনাক্ত করে।’
ওসির আরো দাবি, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ তিনটি গুলি, একটি দেশি পিস্তল ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। বন্দুকযুদ্ধে এসআই জিয়া, এসআই হামিদ, কনস্টেবল মাসুদ ও রাকিব আহত হয়েছেন। তাদেরকে রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কামরুজ্জামান সাধু পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদকব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় তিনি তিন বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শিহাব উদ্দিন বিপু জানিয়েছেন, জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ধন মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব-১০ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী দাবি করেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যা বের একটি দল আজ মঙ্গলবার ভোর রাতে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে মাদকের চালান সেখানে পৌঁছে। র্যা বের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করে। র্যাবও পাল্টা গুলি করে।
‘এ সময় বন্দুকযুদ্ধে ধন মিয়া নিহত হন। তাঁর কাছ থেকে ১১ হাজার ৭০০ পিস ইয়াবা, নগদ ৪৮ হাজার ৭০০ টাকা ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করে পিস্তল উদ্ধার করা হয়। তাঁর স্ত্রী আরজিনা বেগমকেও আটক করা হয়েছে। ধন মিয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে।’
র্যাব কর্মকর্তা জানান, ধন মিয়া উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে।
ফেনী থেকে ওছমান হারুন মাহমুদ জানিয়েছেন, সদর উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া এলাকায় গতকাল সোমবার রাতে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম মঞ্জুর আলম মঞ্জু।
আজ মঙ্গলবার সকালে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৭ সিপিসি-১ এর অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিম দাবি করেন, ‘রাতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাসকে থামতে বলা হয়। কিন্তু চালক সিগনাল অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন র্যাব সেটিকে ধাওয়া দেয়।’
‘একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা মাইক্রোবাস ফেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়ে। এতে মঞ্জুর আলম মঞ্জু গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিম আরো দাবি করেন, মঞ্জুর দেহ তল্লাশি করে ১০ হাজার ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি গুলি, পাঁচটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।
‘মঞ্জু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর লাশ ফেনী সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য রাখা হয়েছে’, যোগ করেন র্যাব কর্মকর্তা।
দিনাজপুরের হিলি থেকে জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিরামপুর উপজেলায় তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রবল হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাতে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।
প্রবল উপজেলার দক্ষিণ দামোদরপুর-বাসুপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে।
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সবুর দাবি করেন, গতকাল দিবাগত গভীর রাতে পুলিশের একটি টইল দল পৌরসভার মণিরামপুর এলাকায় অভিযানে যায়। এ সময় ১০-১২ জন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। তখন পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।
‘এতে মাদক ব্যবসায়ী প্রবল হোসেন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ সময় পুলিশের দুই এসআই ও এক কনস্টেবল আহত হন। তাদের উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
ওসি আরও দাবি করেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, তিনটি গুলি, পাঁচটি ককটেল ও ৯২ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে আরিচ আহমেদ শাহ জানিয়েছেন, আজ ভোর রাতে নগরীর বায়েজিদ এলাকার ডেবারপাড়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শুক্কুর আলী নামে এক ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, গত রাতে বায়েজিদ থানার ডেবারপাড় এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানের সময় র্যাব সদস্যদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি চক্রের গোলাগুলি ঘটনা ঘটে। এ সময় শুক্কুর আলী নিহত হন।
‘শুক্কুর আলী একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় মাদকের ১০টির বেশি মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১০ হাজার ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটারগান ও বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর সদরঘাট এলাকার বরিশাল কলোনীতে গোলাগুলির পর দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় সেখান থেকে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি ইয়াবা, দেশি-বিদেশি মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল ও তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব।