অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন : উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি?
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন নিয়ে গত ১ এপ্রিল উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনাগুলো অনেক জেলা প্রশাসক মেনে চলছেন না বলে অভিযোগ করেছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা অবিলম্বে এ আইন বাস্তবায়নের দাবি জানান।
আজ রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও কৃষ্ণ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারপরও অনেক জেলা প্রশাসক নানা অজুহাতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করে আদালত অবমাননা করছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় কিছু নাগরিক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু তাদের সম্পত্তি বাংলাদেশেই থেকে যায়। এ সব সম্পত্তি নিয়ে পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষ ও জনগণের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কেউ কেউ এগুলোকে নিজের সম্পত্তি বলে ভোগ দখল করতে থাকে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ এসব সম্পত্তি সরকারি মালিকানাধীন করার চেষ্টা করে। সে সময় এ সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ বলা হতো।
পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে শত্রু সম্পত্তি থেকে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন ’ নামকরণ করা হয়। এই আইন অনুযায়ী কোনো সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি বলে প্রমাণিত হলে তা সরকারি মালিকানায় চলে যাবে।
কিন্তু এই বছরের ১ এপ্রিল এই আইন নিয়ে নতুন নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। এই নির্দেশনা মোতাবেক অর্পিত সম্পত্তি সরকারি মালিকানায় নেওয়ার চেষ্টা করা হবে না। একাধিক ব্যক্তি সম্পত্তিটি দাবি করলে তা আদালতে গড়াবে। আর তা না হলে যে ব্যক্তি জায়গাটি ভোগ দখল করছে তার মালিকানায় থাকবে।
এ ছাড়া উচ্চ আদালত এ বিষয়ে আরো আটটি নির্দেশনা দেন। নির্দেশনাগুলো হলো :
১. ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী করা আবেদনের নিষ্পত্তির জন্য প্রত্যেক জেলায় একটি করে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাইব্যুনাল স্থাপনে সরকারের প্রতি নির্দেশ। যে ট্রাইব্যুনালের অর্পিত সম্পত্তি আইনের অধীনে করা আবেদন ছাড়া অন্য কোনো আবেদন নিষ্পত্তির এখতিয়ার থাকবে না। এ ছাড়া যেসব জেলায় এ আইনের অধীনে আবেদনের সংখ্যা অনেক বেশি, সেসব জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে।
২. ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের অধীনে যেসব জেলায় ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে, সে সব ট্রাইব্যুনালকে আবেদনগুলো নিষ্পত্তির জন্য ওই আইনে উল্লেখিত সময়সীমা কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ।
৩. ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের ১০ (১) ধারার অধীনে আবেদন দায়েরের ক্ষেত্রে লিমিটেশন অ্যাক্ট প্রযোজ্য হবে।
৪. আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত অথবা যেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আপিল করা হয়নি, সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু সরকার অর্পিত সম্পত্তি আইন তৈরি করে স্বল্প সময়ের মধ্যে মূল মালিক বা উত্তরাধিকারীদেরকে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেহেতু রিট আবেদন দাখিল বা অন্য কোনো আবেদনের অযুহাতে ট্রাইব্যুনালের ডিক্রি বাস্তবায়নে কোনো বিলম্ব না করতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ।
৫. যেহেতু আইনে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল নিষ্পত্তির জন্য আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের কথা বলা হয়েছে, সেহেতু প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশেষ আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করতে হবে।
৬. সরকারের অধীনে থাকা অর্পিত সম্পত্তির মধ্যে যেসব সম্পত্তির আইনগত দাবিদার নেই, সেসব সম্পত্তি সরকার শুধু মানবিক উন্নয়নের (হিউম্যান ডেভলপমেন্টের) কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
৭. সরকারের অধীনে থাকা অর্পিত সম্পত্তির মধ্যে এরই মধ্যে দেশের উন্নয়নে যেসব সম্পত্তিতে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ সম্পত্তিটির মূল মালিকের নামে করার জন্য সরকার আইন প্রণয়নে পদক্ষেপ নিতে পারে।
৮. ৬ ধারা অনুযায়ী যেসব সম্পত্তি এরই মধ্যে অফেরতযোগ্য বলা হয়েছে, সেগুলো ফেরতের পরিবর্তে কোনো আইনগত দাবিদারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের জন্য সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে।