কর্মক্ষেত্রে গিয়ে স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও প্রতিবন্ধীরা বেশি নিষ্ঠাবান বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করলে তারা অভিশাপ নয় বরং আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে বলেও তিনি জানান।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি) আট নম্বর ফ্লোরে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘যুক্তি আলোয় দেখি’ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে।

নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা রাষ্ট্রের বোঝা নয়, তারা কোনো সমস্যাও নয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ সকল প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সরকার প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীরা খুবই নিষ্ঠাবান হয়। তাদের ভুলভ্রান্তি হয় কম।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বিএসসি আরো বলেন, ‘পরিবারে প্রতিবন্ধিত্ব অভিশাপ নয়, স্রষ্টার আশীর্বাদ। ঘরের লক্ষ্মী হিসেবেই প্রতিবন্ধীর আগমন ঘটে। প্রয়োজন তাদের প্রতি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের। প্রতিবন্ধীদের প্রতি কোনো ধরনের উপেক্ষা, বঞ্চনা, বৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের মধ্যে যে অন্তহীন আত্মশক্তি লুকায়িত রয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে। প্রতিবন্ধীরা অনেক কাজের জন্যেই উপযোগী। সমস্ত বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবন্ধীদেরকে উন্নয়নের মূলধারায় এগিয়ে নিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ‘প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা’ শীর্ষক এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইডেন মহিলা কলেজের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের বক্তব্য শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের জন্যে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়াও ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজনে আরো সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।  

অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হলে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও বিনোদনসহ তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা থাকা উচিত। সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রদত্ত কোটা বাধ্যতামূলক করে অন্ততপক্ষে ৫ শতাংশ কোটা রাখা দরকার। দুঃস্থ প্রতিবন্ধীদের ভাতা বাড়িয়ে বর্তমানে প্রদত্ত ৭০০ টাকার পরিবর্তে দেড় হাজার টাকা করা প্রয়োজন। একই সাথে ভাতার আওতায় ৮ লাখের জায়গায় বাড়িয়ে কমপক্ষে ২০ লাখ করা প্রয়োজন।’

আগামীতে জাতীয় সংসদে প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্ততপক্ষে তিনটি সংরক্ষিত আসন রাখার দাবিসহ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায়ও যাতে প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্ব থাকে সে বিষয়েও হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সুপারিশ করেন।

অনুষ্ঠানের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রয়েছে যারা ইসলামী জ্ঞান সমৃদ্ধ এবং ভালো কোরআন তেলাওয়াত ও ইমামতি করতে পারে। এসব প্রতিভাবান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইসলামী স্কলারদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মসজিদ, মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারিভাবে বিনা খরচে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিচারক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, মু. শাহ আলম চৌধুরী, অধ্যাপক রোকেয়া পারভীন জুঁই, সাংবাদিক ফারিয়া হোসেন, ড.তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন।

প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।