ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে ভোট, এক কেন্দ্র স্থগিত
ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার কারণে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টায় এ সিটি করপোরেশনের ২৮৯টি কেন্দ্রে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়।
বেলা ১১টার দিকে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২০২ নম্বর ভোটকেন্দ্র ইকবালনগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েকজন ঢুকে জোর করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দেয় এবং বাক্সে ঢুকিয়ে ফেলে।
এ ঘটনার পর ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বিষয়টি জানালে দুপুর পৌনে ১টার দিকে ভোট স্থগিত করা হয় বলে এনটিভি অনলাইনকে জানান নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুছ আলী। তিনি বলেন, ‘ওই কেন্দ্রে কয়েকজন এসে প্রকাশ্যে ভোট দিচ্ছিল। এসব পেপার জব্দ করা হয়েছে। তারপর ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে।’
তবে কারা ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করেছিল, সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এর আগে সকালে নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ফাতেমা উচ্চ বিদ্যালয়েও একইভাবে জোর করে ভোট দেওয়া হয়। পরে অভিযোগে পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা ভোট বন্ধ রাখা হয়।
এ ব্যাপারে ইউনুছ আলী বলেন, ফাতেমা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রেও কয়েকজন ঢুকে কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়। অভিযোগ পেয়ে সেখানে ভোট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে সেখানে ফের ভোট গ্রহণ শুরু হয় বলে জানান তিনি।
আজ সকাল ৮টা থেকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সকাল পৌনে ৯টার দিকে খুলনা নগরীর রহিমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
ধানের শীষের প্রার্থী অভিযোগ করেন, ভোট শুরুর আগে অনেক কেন্দ্রে তাঁর এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ভোট শুরুর পর ২৫-৩০টি কেন্দ্র থেকে তাঁর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এসব অভিযোগে ব্যাপারে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ইউনুছ আলী দুপুর ১২টার দিকে মোবাইলে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দু-একটি ভোটকেন্দ্রে গোলযোগের খবর পেয়েছি। তবে সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে।’
একই কথা বলেছেন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির। বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘আমরা লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ পাইনি, তবে আমরা শুনেছি। শোনার পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, দু-একটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আমরা সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে জানিয়েছি এবং ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশনে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেয়র পদে যে পাঁচজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক (নৌকা), বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অধ্যক্ষ মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাতপাখা) এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)।
খুলনা সিটিতে মোট ভোটার চার লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ ও নারী দুই লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। ভোটকেন্দ্র ২৮৯টি। প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার রয়েছে চার হাজার ৯৭২ জন।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ হোসেন জানান, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুটি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হচ্ছে। নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ২০৬ নম্বর কেন্দ্র ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ২৩৯ নম্বর কেন্দ্রে মোট ১০টি ইভিএম রয়েছে।
২৭ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ১৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে একটি কেন্দ্র হচ্ছে পিটিআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে পাঁচটি বুথ রয়েছে। এখানে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে। এই কেন্দ্রে পুরুষদের বুথে মোট ভোটার এক হাজার ৫৯৩ জন।