রাজধানীর বাড্ডায় খুনের পর খুন!
একটি খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো খুনের ঘটনা ঘটছে রাজধানীর বাড্ডায়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েই ঘটছে এসব খুনের ঘটনা। আর প্রত্যেকটি ঘটনায়ই ব্যবহার করা হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে প্রতিপক্ষকে।
পুলিশ জানিয়েছে, অধিকাংশই ‘টার্গেট কিলিং।’ পুলিশের দাবি, ‘কিলাররা’ বাইরে থেকে এসে ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়।
বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী এনটিভি অনলাইনকে জানান, প্রতিটি ঘটনার পর পরই খুনিরা আটক হচ্ছে, অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। তিনি আরো জানান, গত কয়েক মাসে পাঁচ ‘সন্ত্রাসী ক্রসফায়ারে নিহত’ হয়েছে। সম্প্রতি দুটি ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা রিমাণ্ডে আছে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মেরুল বাড্ডার মাছের বাজারের কাছে দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে আবুল বাশার নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর জনতার হাতে আটক নুরুল ইসলামকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে ওই রাতেই আফতাব নগর এলাকায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হন তিনি।
গত দুই সপ্তাহে ঘটে আরো দুটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড। গত ২২ এপ্রিল স্থানীয় বেরাইদ ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই কামরুজ্জামান দুখু মিয়া। চোখে গুলিবিদ্ধ হন তাঁর আরেক ভাই কামাল হোসেন। ওই ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন।
ঘটনার পর গত ২৪ এপ্রিল জাহাঙ্গীর আলম বাদি হয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য রহমতুল্লাহর ভাগ্নে ফারুকসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। তাঁদের মধ্যে ২১ জন আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। আর ফারুক, মারুফ ও আইয়ুবকে আদালত কারাগারে পাঠান। পরে তাঁদের তিনদিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত বুধবার রাতে মধ্য বাড্ডার আলাতুন্নেসা স্কুল রোডে জাগরণী ক্লাবের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় ডিশ ব্যবসায়ী (কেবল অপারেটর) আবদুর রাজ্জাক বাবু ওরফে ডিশ বাবুকে। যদিও গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাফায়েত তানভীর, রাসেল ও সোহেল নামে তিনজনকে আটক করে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে তানভীরকে নিয়ে ওই রাতেই আফতার নগরে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে ডিবির সঙ্গে ‘ক্রসফায়ারে’র ঘটনা ঘটে। এতে তানভীর নিহত হন। নিহত তানভীর সাফায়েত হোসেন তামরিন ওরফে রানার (২৮) বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ এক ডজন মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে আটক হওয়া রাসেল ও সোহেল ডিবিকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা মেহেদী গ্রুপের প্রধান মেহেদী ও স্থানীয় ডালিম-রবিন গ্রুপের ইশারায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালের ৩ মে বাড্ডা জাগরণী ক্লাবের ভেতরে বাড্ডা থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন রাহিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
বাড্ডা এলাকায় প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাব ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘অধিকাংশই টার্গেট কিলিং। আর কিলাররা বাইরে থেকে এসে ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়।’ দেশের বাইরে থেকেও এসব ‘কিলারদের’ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।