জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম আর নেই
জাতীয় অধ্যাপক ও ভাষাসৈনিক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম আর নেই। গতকাল বুধবার রাতে তিনি ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
মুস্তাফা নূরউল ইসলাম দুই ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মুস্তাফা নূরউল ইসলামের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পৃথক শোকবাণীতে তাঁরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সাবেক উপাচার্য, শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম কিছুদিন ধরে অসুস্থ হয়ে বাসায় চিকিৎসারত ছিলেন। গত রাতে বাসায় তাঁর অবস্থার অবনতি হলে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ হাসপাতালে চিকিৎকরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুস্তাফা নূরউল ইসলামের মৃত্যুর সংবাদ দ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। তাঁর মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। মরহুমের তিন ছেলেমেয়ে প্রবাস থেকে দেশে ফেরার পর দাফন করা হবে।
মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ১৯২৭ সালের ১ মে বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করার পর তিনি শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। সেন্ট গ্রেগরিজ, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, করাচি, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। শিক্ষকতার পাশপাশি তিনি গবেষণা ও লেখালেখি করেন দীর্ঘকাল। তিনি বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
টেলিভিশনের উপস্থাপনায় মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ভিন্নমাত্রার যোগ করেন। তাঁর গবেষণায় টিভির অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশত।
উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি (দুই খণ্ড), সমকালে নজরুল ইসলাম, নির্বাচিত প্রবন্ধ, আমাদের মাতৃভাষার চেতনা ও ভাষা আন্দোলন, নিবেদন ইতি, নিঃসঙ্গতায় হারিয়ে যাক কষ্টগুলো, আবহমান বাংলা, সাময়িকপত্রে জীবন ও জনমত (দুই খণ্ড), শিখা সমগ্র, মুসলিম বাংলা সাহিত্য।
সাহিত্য, শিক্ষা, গবেষণায় অবদানের জন্য মুস্তাফা নূরউল ইসলাম স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
‘সাহিত্য অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হলো’
রাষ্ট্রপতি এম আবদুল হামিদ দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলামের মৃত্যুতে আজ শোক প্রকাশ করেছেন।
এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মুস্তাফা নূরউল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
রাষ্ট্রপতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে সাহিত্যে মুস্তাফা নূরউল ইসলামের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে দেশের সাহিত্য অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হলো।’
আবদুল হামিদ তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
‘প্রতিটি সংগ্রামে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম যুক্ত ছিলেন’
মুস্তাফা নূরউল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বৃহস্পতিবার এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষাটের দশকের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, একষট্টির প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনসহ সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ আন্দোলনেও তিনি অনন্য অবদান রাখেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে লন্ডনে পিএইচডি গবেষণারত অবস্থায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে জনমত গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এই বিশিষ্ট সাহিত্যিকের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।