১৫ মে গাজীপুর সিটির ভোট নেওয়া সম্ভব নয় : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল হয়েছে। আপিলের রায় যদি নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও যায়, তারপরও তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে গাজীপুর সিটির ভোট নেওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আজকেও যদি আদালতের সিদ্ধান্ত হতো তাহলেও নির্ধারিত সময়ে (১৫ মে) নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্ভব হতো। আর যদি এ ব্যাপারে আদালতের আদেশ আগামীকালও হয় তবে ভোটের তারিখ পরিবর্তন করতে হবে। তারপরও দেখি কোর্ট কী রকম নির্দেশ দেয়।
সিইসি আরো বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যাপারে কোর্ট যদি বলেন যে ১৫ মে ভোট নিতে হবে তখন যেভাবেই হোক কোর্টের আদেশ আমাদের পালন করতে হবে। কিন্তু এখন ক্রিটিক্যাল সময় হয়ে গেছে। আমরা উকিল নিয়োগ করেছি, আজকে আপিল করার কথা (করা হয়ে গেছে, কাল শুনানি হবে)। হয়তো আগামীকাল শুনানি হবে। আদালত সময় বেধে না দিয়ে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হবে। তবে এর জন্য পুনরায় তফসিল ঘোষণার প্রয়োজন হবে না, শুধু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করলেই হবে।
আজ বুধবার দুপুরে গাজীপুরে জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সিইসি।
এর আগে সিইসি জেলা নির্বাচন অফিস পরিদর্শন করেন এবং জেলা প্রশাসকের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে ওই মতবিনিময় সভায় গাজীপুরের নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা রকিব উদ্দন মন্ডল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাহমুদ হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার ইয়াসির আরেফিন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামানসহ জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তারা প্রত্যেকেই মনে করেন এ সময়ে নির্বাচন নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ পুলিশ সুপার জানান, নির্বাচন উপলক্ষে প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার পুলিশ ফোর্স বিভিন্ন জায়গা থেকে মোতায়েন করতে হবে, ৫০০ থেকে ৬০০ গাড়ি রিক্যুইজিশন করতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করতে হবে, যারা বিভিন্ন জেলা থেকে আসবেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা সাড়ে আট হাজার, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতগুলো কাজ এ সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা আমি অসম্ভব মনে করি।
নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো গাফিলতি আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কেএম নুরুল হুদা বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি যে সীমানা নিয়ে কোনো জটিলতা আছে কি না, কোর্টে কোনো বিষয়ে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে কি না। তখন তারা পরিষ্কার চিঠি দিয়েছে কোথাও কোনো বিভেদ নেই, সীমানা নির্ধারণের কোনো সমস্যা নেই। তখনই আমরা এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করি। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগও যেভাবে চিঠি দিয়েছে তাতেও আমি কোনো ভুল দেখি না। তারা তো জেনেশুনে কোর্টের আদেশ বিচার-বিশ্লেষণ করে আমাদের বলেছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় কোনো সমস্যা নেই। তখনই আমরা এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করি, আর এটাই নিয়ম।
আবার আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো আইনি জটিলতায় পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, সেটি নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, তাই সে নির্বাচন নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে সিইসি কেএম নুরুল হুদা গাজীপুরে আসেন। সার্কিট হাউজে রাতে থেকে বুধবার সকালে জেলা নির্বাচন অফিস পরিদর্শন, সার্ভার স্টেশন, স্মার্ট কার্ড নিয়ে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার কর্মসূচিতে অংশ নেন।
গত ৬ মে সীমানা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই স্থগিতাদেশ দেন।
একই সঙ্গে ঢাকার সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না—এ মর্মে রুলও জারি করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট বি এম ইলিয়াস কচি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ।
৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত। এখানে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। গত ৪ মার্চ সিটি করপোরেশনের সীমানা নিয়ে গেজেট জারি হয়। যেখানে শিমুলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়বাড়ী, ডোমনা, শিবরামপুর, পশ্চিম পানিশাইল, পানিশাইল ও ডোমনাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
রিটের পক্ষে আইনজীবী জানান, ২০১৩ সালে এ ছয়টি মৌজাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তখন বিষয়টি নিয়ে এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ আবেদন করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রাহ্য না করায় হাইকোর্টে রিট করার পর আদালত আবেদনটি পুনর্বিবেচনা করতে নির্দেশ দেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে এ ছয়টি মৌজা শিমুলিয়ার মধ্যেই ছিল। নির্বাচনে আজহারুল ইসলাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এখন আবার এ ছয় মৌজাকে গাজীপুর সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেহেতু তিনি ছয়টি মৌজার ভোটেও নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাই এ ছয়টি মৌজাকে সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত উক্ত আদেশ দেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন ১৫ মে হওয়ার কথা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন স্থগিতের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেছেন। আজ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করে নির্বাচন কমিশন। তিনটি আবেদনের ওপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।