মানিকছড়িতে সরকারি স্কুলে ভর্তিতে অনিয়ম
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানিকছড়িতে রানী নিহার দেবী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ভর্তিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অনিয়মের সত্যতা উঠে এসেছে। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সুপারিশে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১০ জন ও নবম শ্রেণিতে দুই শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার পরও ভর্তি করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার আবদুর শহিদ নামের এক অভিভাবক জানান, ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে তাঁর দুই সন্তান বেশি নম্বর পেয়েও স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানের চেয়ে কম নম্বর পেয়ে ফেল করে ভর্তি হয়েছে এমন শিক্ষার্থীর পেয়েছি বেশ কয়েকজন।’ অর্থের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার অভিযোগ তুলেন এই অভিভাবক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহসান উদ্দীন মুরাদ জানান, সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়েছে—এমন অভিযোগে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুবাইয়া আফরোজকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের পর তাঁরা ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুবাইয়া আফরোজ জানান, গত ১৯ এপ্রিল তদন্ত কমিটির কাজ শেষ হয়েছে। এতে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১০ জন ও নবম শ্রেণিতে দুজনকে অকৃতকার্য হওয়ার পর রানী নিহার দেবী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পরীক্ষা কমিটি, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ভর্তি কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হলেও তার থেকে কোনো সুপারিশ নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে দেখা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণির শূন্য আসনের ৮৯ জনের মধ্য ১০ জন সুপারিশে ভর্তি হয়েছে। আর নবম শ্রেণির ১০ জনের মধ্যে দুজন। এরা সর্বনিম্ন ৫ নম্বর পেয়েও ভর্তি হয়েছে সরকারি এ বিদ্যালয়ে।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন জানান, মানিকছড়ি আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈন উদ্দিনের সুপারিশে এসব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানতেন না, শূন্য আসনে ভর্তির বিষয়ে সভাপতির অনুমতি নিতে হয়। লিখিত জবাবে তিনি জানান, এ বছর নির্বাচনের বছর। আর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, সামনে ভোট চাইতে হবে জনগণের কাছে। নেতাদের এমন গ্রহণযোগ্যতার কথা চিন্তা করে তাদের জোর সুপারিশে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
মানিকছড়ি আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁরা দলীয় প্যাডে কিছু ছাত্রের ভর্তির সুপারিশ করেছেন। তবে ১০ জনের জন্য করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান উদ্দীন মুরাদ জানান, অনুমোদনবিহীন ভর্তিতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট হাতে এসেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর এ তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হবে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।