ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ
ঢাকার সাভারে পোশাক তৈরির একটি কারখানায় অসুস্থ হয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে কারখানার অন্য শ্রমিকরা। তারা কারখানার সামনে পার্কিং করে রাখা বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
আজ শনিবার দুপুরে সাভার পৌর এলাকার উলাইল মহল্লায় অবস্থিত প্রাইড গ্রুপের এইচআর টেক্সটাইল কারখানায় শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে কারখানার সামনে মহাসড়কে অবরোধ গড়ে তোলে শ্রমিকরা। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অবরোধ করে রাখে তারা।
মৃত শ্রমিকের নাম মো. রাশেদুল ইসলাম (২৫)। তিনি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার জানযায়গীর গ্রামের মঞ্জুর মুন্সির ছেলে। রাশেদুল উলাইল এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থেকে এইচআর টেক্সটাইল কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর দেড় বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সহকর্মীরা।
ঢাকার সাভারে এইচআর টেক্সটাইল কারখানার সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি : এনটিভি
নিহতের সহকর্মী মাজেদা বেগম জানান, রাশেদুল দুপুরের খাবার খেয়ে মেশিনে এসে কাজ করতে বসলে কিছুক্ষণ পর তাঁর মাথা ব্যথা ও বমি হতে থাকে। এ সময় তাঁকে কারখানার নিজস্ব মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ব্যথার ওষুধ দেন। কিন্তু ওষুধ খাওয়ার পরও তাঁর শরীর ঠিক না হওয়ায় তিনি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কারখানার প্রডাকশন ম্যানেজার (পিএম) আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে ছুটি চান। পর্যায়ক্রমে ফ্লোর ইনচার্জ জুলহাস এবং এপিএম রুবেলসহ সবার কাছে ছুটি চেয়ে ব্যর্থ হন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। কারখানার লোকজন উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাশেদুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
কারখানার শ্রমিক ওসমান গনি বলেন, রাশেদুল বার বার ছুটি চাওয়ার পরও পিএম তাঁকে ছুটি দেননি। একপর্যায়ে ছুটি না পেয়ে কারখানায় ভেতরেই তাঁর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার পর তাঁকে অন্য হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অপর শ্রমিক আমেনা বেগম জানান, কারখানার পঞ্চমতলায় কাজ করতেন রাশেদুল। তিনি দুপুরে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার পরও বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কর্তৃপক্ষ কারখানার মূল গেট বন্ধ করে ঘোষণা দেওয়ার মাইকে ভেতরে উচ্চ স্বরে গান বাজানো শুরু করে।
এদিকে রাশেদুলের মৃত্যুর খবর শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দুপুর ৩টা থেকে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দোষীদের বিচারের দাবিতে এক ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিচারের আশ্বাস দিয়ে বিকেল ৪টার দিকে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক চলার পর বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় বিকেল ৫টায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আবারও মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
ঢাকার সাভারে এইচআর টেক্সটাইল কারখানার সামনে শ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি : এনটিভি
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়, কেন কারখানা কর্তৃপক্ষ অসুস্থ হওয়ার পরও রাশেদুলকে ছুটি দিল না। এ ঘটনায় দায়ীদেরকে বরখাস্তসহ বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। এ ছাড়া নিহতের দেড় বছরের একটি বাচ্চা থাকায় তাঁর ভবিষ্যতের জন্য দশ লাখ টাকা এবং রাশেদুলের যাবতীয় পাওনা পরিশোধেরও দাবি জানায়।
কিন্তু কারখানা মালিকের ছেলে নাহিদ ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিকভাবে দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা জানান। এ ঘটনায় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে তাঁর ওপর চড়াও হয় এবং কারখানার সামনে রাখা বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
রাতে সাড়ে ৮টার দিকে মালিকপক্ষ নিহত ওই শ্রমিকের পরিবারকে আট লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিলে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ ছেড়ে দেয়।
এদিকে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাটির সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসিনুল কাদির বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘক্ষণ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। এ সময় অনেককে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা গেছে।