‘আমি গুরুতরভাবে অসুস্থ, এটা কোর্টকে জানাবেন’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারান্তরীণ বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছেন তাঁর পাঁচ আইনজীবী।
আজ বিকেল ৪টার দিকে পাঁচ আইনজীবী পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। তাঁরা বের হয়ে আসেন বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে। পরে জেলগেইটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনজীবীরা।
প্রতিনিধিদলে ছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজ্জাক খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
আগামী ৮ মে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি রয়েছে উল্লেখ করে তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজ্জাক খান বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বলেছেন, আমি অত্যন্ত গুরুতরভাবে অসুস্থ- এটা কোর্টকে জানাবেন। জেলে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকার কারণে দিন দিন স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। মেডিকেল গ্রাউন্ডে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট- এটা সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থাপনের জন্য খালেদা জিয়া আমাদের বলেছেন।’
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘হাইকোর্ট বিস্তারিত শুনানি করে ম্যাডামকে জামিন দিয়েছেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে এবং আমার ৫০ বছরের ক্রিমিনাল প্রাকটিসে পাঁচ বছর সাজার পর হাইকোর্ট বিভাগ যখন জামিন দেয় উচ্চ আদালত সেই জামিন কখনো স্থগিত করেননি। এখানে শুধু স্থগিতই করেননি, এখানে তাঁরা পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য দীর্ঘ সময় দিয়ে তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’
‘আমরা আশা করি, বিশ্বাস করি, দেশে যদি আইনের শাসন বিন্দুমাত্র থাকে তাহলে অবশ্যই ৮ তারিখে ম্যাডাম জামিন পাবেন’, যোগ করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা ম্যাডামকে দেখতে এসেছিলাম আইনজীবী হিসেবে, যেহেতু আমরা মামলা করি সেই কারণে। ম্যাডাম খুবই অসুস্থ। তাঁর যে বাম হাত তিনি নাড়াতে পারেন না, তা শক্ত হয়ে গেছে এবং ঘাড়েও সমস্যা আছে। অর্থাৎ এই রকম একটি স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বন্দি থাকা অবস্থায় যেরকম অবস্থা হয় তাই ম্যাডামের হয়েছে। ম্যাডামের বয়সও চিন্তা করতে হবে; তাঁর বয়স ৭৩ বছরের উপরে।’
‘আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, ম্যাডামের যে চিকিৎসা দরকার তা জেলখানায় সম্ভব নয়। ম্যাডামের চিকিৎসা ইউনাইটেড হাসপাতালে হওয়া দরকার’, যোগ করেন জয়নাল আবেদীন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি আরো বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন জেল কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লেখেছে তাঁর চিকিৎসার জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। দেশের তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, দেশের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দলের প্রধান তিনি আজকে জেলখানায় আছেন। কী মামলায় আছেন তা আপনারা জানেন- একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলায় তিনি আজকে বিনা চিকিৎসায় জেলখানায় কষ্ট পাচ্ছেন। এটা খুবই্ দুঃখজনক।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ডা. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রায় ঘোষণার পর থেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে আছেন।