নির্বাচনের আচরণবিধি গোপনে ভঙ্গ হচ্ছে : গয়েশ্বর
নির্বাচনী আচরণবিধির কথা বলা হলেও সরকারদলীয় লোকজন নানাভাবে গোপনে এই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
আজ বুধবার দুপুরে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিভিন্ন উপ-কমিটির প্রধানদের নিয়ে নগরীর উদয়ন ক্লাবে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে এই অভিযোগ করেন মঞ্জুর নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এটা একটা দুরাশা। আমি খুলনাতে আজকে প্রায় ১০ দিন আছি। আমাদের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং প্রতীক ধানের শীষ। প্রতীক এবং প্রার্থী উভয়ই জনগণের কাছে সমান গ্রহণযোগ্য। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা বক্তব্য পাওয়া যায়, প্রথমত হলো ভোটটা দিতে পারব কিনা। দ্বিতীয়ত হলো, ভোটটা দিলে আপনারা গুণে নিতে পারবেন কিনা। এই দুইটি শব্দ থেকে কিন্তু নির্বাচনের সামগ্রিক চিত্রটা অত্যন্ত পরিষ্কার। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের মধ্যে আশঙ্কা, আতঙ্ক আছে। এই আশঙ্কা ও আতঙ্কের পেছনে কিছু কারণ আছে। যেগুলো দৃশ্যমান নয়, যেগুলো আড়ালে আবডাল থেকে তারা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। নানাজনকে হুমকি দিচ্ছে। ব্যবসায়ী, সিভিল সোসাইটি এবং খুলনার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একের পর এক গোপন মিটিং। নির্বাচনের আচরণবিধি গোপনে ভঙ্গ করছে, প্রকাশ্যে আসছে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক, এর বাইরেও কিছু সংসদ সদস্য, তারা নিয়মিত খুলনাতে আসছে এবং বিভিন্ন জায়গায় তারা বসছে।’
ক্ষমতাসীন সরকার ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনে আসতে পারবে না জেনেই নানাভাবে খুলনা সিটি নির্বাচনকে নিজেদের পক্ষে নিতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘তারা নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে জয়লাভ করতে পারবে না, এটা নিশ্চিত হয়েই, ফলাফল তাদের পক্ষে নেওয়ার জন্য, অতীতে যে ধরনের কর্মকাণ্ড করেছিল, এবারেও তারা সেগুলো নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে। আর আশঙ্কা এবং আতঙ্কাগুলি ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। প্রচারে বাধা দেওয়া এবং গণসংযোগের সময় মাঝখান থেকে কাউকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া। এর মধ্যে কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এটাও কিন্তু প্রচারে এক ধরনের বাধা, আতঙ্কিত করা কর্মীদেরকে। এবং প্রশাসনের বিভিন্নপর্যায় থেকে কারো কারো বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে। ভোটারদেরকে নিরুৎসাহিত করা, ভোটকেন্দ্রে যাতে না যায়। এই ধরনের কিছু কথা আমাদের কানে আসে। যেটা হয়তো আপনারাও জানেন। হয়তো প্রচারে আপনাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে বলেই আপনারা সবকিছু প্রচার করতে পারছেন না। আপনাদের সাংবাদিক মহল থেকেই কিন্তু আমরা অনেক খবর পাই। যেই খবরগুলির ভিত্তিতেই বুঝা যায়, যে সরকার চেষ্টা করবে ছিনিয়ে নিতে।’
সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি রয়েছেন এমন দাবি করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাধ্যমে লড়াই করব। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যেই আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করছি, সংগ্রাম করছি। এবং এই সংগ্রাম করতে গিয়ে আজকে আমাদের নেত্রী এক অপবাদের সম্মুখীন। এবং তাঁকে দুর্নীতির মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। যেই দুর্নীতির মামলাটা বেসলেস এবং একান্তই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। ফ্যাক্ট বলতে কোনো জিনিস নাই। যার কারণে, আমাদের নেত্রীকে জেলে থাকতে হবে। উচ্চ আদালতে জামিন দিলেও সর্বোচ্চ আদালত তার জামিন স্থগিত করছে। সেটাও বিরল বাংলাদেশে। সাধারণত হাইকোর্ট যখন জামিন দেয়, সুপ্রিমকোর্ট সেই জামিন কখনো স্থগিত করে না। কিন্তু এইখানে একটা নজিরবিহীন ঘটনা ঘটছে। আদালতকে দোষারোপ করে লাভ নাই। সেটার কারণ হলো আদালতটা সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এবং তারাও বিভিন্ন ধরনের হুমকির সম্মুখীন। প্রধান বিচারপতিকে (পদত্যাগ করা সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা) যেভাবে দেশান্তরিত করছে, এবং তাঁকে যেভাবে পদত্যাগে বাধ্য করছে, এটার মাধ্যমে আদালতের বিচারপতিদের সাথে সরকারের আচরণটা কেমন হবে, সেটা কিন্তু দৃশ্যমান হয়েছে।’
এই সময় বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল উপস্থিত ছিলেন।