সিরাজগঞ্জ-২ আসন পুনর্নির্ধারণ : কার লাভ কার ক্ষতি
সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) নির্বাচনী এলাকার সীমানা নতুন করে নির্ধারণ করায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হিসাব চলছে ভিন্নভাবে। এ আসনের বহুলী ইউনিয়ন কেটে যোগ হয়েছে সিরাজগঞ্জ-১ কাজিপুর আসনের সঙ্গে। ইউনিয়নটি বরাবরই বিএনপির শক্ত দুর্গ হিসেবে পরিচিত। এ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক ও ভোটের হিসেবে এগিয়ে রয়েছে।
সোমবার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশন সভার পর সদর থেকে বহুলী ইউনিয়নকে কাজীপুর আসনে যোগ করার সিদ্ধান্ত জানান নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। এরপর থেকেই বড় দুই দলসহ দলীয় সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সেই সাথে শহর-গ্রামাঞ্চলেও চলছে নানা গুঞ্জন। তবে ভোটের হিসাব-নিকাশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ শহরের কোলঘেষেই অবস্থিত বহুলী ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নটি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী বিএনপি-জামায়াত। আন্দোলন সংগ্রামে এ ইউনিয়ন বরাবরই ভূমিকা রাখে। নির্বাচন কমিশনের সংসদীয় আসন নির্ধারণের সংবাদের পরই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। এ ইউনিয়নে প্রায় ২৯ হাজার ভোট রয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, এ ইউনিয়ন থেকে বিগত নির্বাচনগুলোতে বিএনপি প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পেত। যার সামগ্রিক ভোটের হিসাবে জাতীয় নির্বাচনগুলোতে বিএনপিকে জয়ী করতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখত। তবে বর্তমানে এ ইউনিয়নটি কেটে যাওয়ায় বিএনপির ভোটের হিসাব-নিকাশে বড় প্রভাব ফেলবে এমন আশঙ্কা করছেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মীই।
বহুলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন সরকার জানান, সদরের রাজনীতির সঙ্গে বহুলী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক নানা কর্মকাণ্ডে একটি অবস্থান ছিল। ভৌগোলিক কারণে সংসদ নির্বাচনগুলোতে বড় ধরনের প্রভাব রাখত। তবে এ ইউনিয়ন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ইউনিয়ন তথা ইউনিয়নবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ভোটের হিসাবে বড় ধরনের একটা প্রভাব পড়বে। কারণ বিগত নির্বাচনগুলোতে রতনকান্দি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকের সমতা পূরণ করতে বহুলী ও সদর বড় ভূমিকা রাখত। সেখানে এই ইউনিয়নটি কেটে যাওয়ায় ভোটের সমীকরণে বিএনপি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হলো। তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপির যে গণজোয়ার রয়েছে তাতে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন তথা সিরাজগঞ্জ জেলার উন্নয়নে সাধারণ জনগণ আমাদের পাশে আছে।’ এ ছাড়া এ আসনে ভোটের হিসাবে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই এখন শক্তিশালী। তবে বহুলী ইউনিয়ন কেটে যাওয়ায় আগামী নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান বিগত নির্বাচনের তুলনায় আওয়ামী লীগই বেশি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন-সোনামুখী, চালিতাডাঙ্গা, গান্ধাইল, শুভগাছা, কাজিপুর, মাইজবাড়ী, খাজরাজবাড়ী, চরগিরিশ, নাটুযয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, মনসুরনগর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন-রতনকান্দি, বাগবাটী, মেছড়া, ছোনগাছা ও বহুলী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনটি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, খোকশাবাড়ি, শিয়ালকোল, কালিয়া হরিপুর, সয়দাবাদ ও কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল, ভদ্রঘাট, ঝাঐল ও রায়দৌলতপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে।