নারী নেতৃত্ব বিকাশে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান
সামাজিক প্রথার কারণে নারী শ্রমিকদের সংসার ও কর্মক্ষেত্রে দ্বিগুণ দায়িত্ব পালন করতে হয়, যা তাঁদের স্বাস্থ্য ও জীবনীশক্তি শুষে নেয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউট (বাশি)। আর এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য পরিবারের সব সদস্যকে সংসারের দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেয় সংস্থাটি।
গতকাল রোববার ‘ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনে নারীর কাজ করার বাধা’ শীর্ষক এক সমীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে বাশি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তৈরি পোশাকশিল্পের মতো নারীর শ্রমঘন শিল্পের ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনগুলোতে নারীর নেতৃত্ব বিকাশে উপযুক্ত কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য শ্রমিক সংগঠনগুলোকেই জোরদার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে ওই সমীক্ষায় উঠে আসে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী শ্রমিকদের সংগঠনগুলোতে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধে নেতাদের জোরদার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলা হয়। কারণ, তা না হলে সংগঠনের ওপর শ্রমিকদের আস্থা উঠে যাবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি বর্ষীয়ান শ্রমিক নেতা শাহ আতিউল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাশির সদস্য ফারহানা আফরিন তিথি। এতে বিশেষজ্ঞ বক্তব্য দেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শবনম হাফিজ।
মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশের ট্রেড ইউনিয়ন ও অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনে নারীর অংশগ্রহণের পরিস্থিতি বিষয়ে বাংলাদেশ শ্রম ইনস্টিটিউট পর্যায়ক্রমিক গবেষণা করছে। এর প্রথম ধাপে নারীর শ্রমঘন রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিক সংগঠনগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্বের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে।
প্রধানত গুণগত পদ্ধতি অনুসরণ করে সম্পাদিত এ সমীক্ষায় অংশ নিয়েছেন সাধারণ নারী ও পুরুষ শ্রমিক, নারী ও পুরুষ শ্রমিক নেতা ও শ্রম আদালতের আইনজীবী।
মূল প্রবন্ধে ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনে যোগদানের ক্ষেত্রে এবং নেতৃত্ব বিকাশে নারী শ্রমিকদের প্রধান ছয়টি বাধা চিহ্নিত করা হয় যেগুলো হচ্ছে, ঘরে-বাইরে প্রচণ্ড কাজের চাপ, শ্রমিক অধিকার আদায়ে নারী নেতৃত্ব দিলেও সংগঠনে পুরুষরাই বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত থাকেন, নারী নেতৃত্ব বিকাশে বাধা সৃষ্টির জন্য সংগঠনের নারীদের মধ্যে স্বার্থের কৃত্রিম দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা হয়, শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতি সাধারণ শ্রমিকের আস্থার অভাব এবং বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৩, ২৬, ২৭, ১৭৯ ও ১৮০ ধারাসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক ধারা, যা শ্রমিকদের সংগঠন করার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে।
শাহ আতিউল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে শ্রমিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নারী। শ্রমিক আন্দোলনে তাঁদের অংশগ্রহণ বা অবদান মোটেই কম নয়। অথচ সংগঠনগুলোর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাঁদের অবস্থান সুদৃঢ় নয়, যা সুস্পষ্টভাবে শ্রমিক আন্দোলনের দুর্বলতার দিককেই উন্মোচিত করছে।’
শ্রমিক নেত্রী জলি তালুকদার বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে নারীরা সামনের সারিতে থাকলেও সংগঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান এখনো গৌণ। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা নারী হওয়া সত্ত্বেও সাংগঠনিক পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম। এ অবস্থা কাটাতে করণীয় খুঁজে বের করতে আরো গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন ৩২টি, খাতওয়ারি ফেডারেশন ১৬৯ এবং বেসিক ইউনিয়ন সাত হাজার ২৮৯টি। ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা ২৩ লাখ, যার ১৫ শতাংশ নারী। দেশে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ৫০০-এর ওপরে।