কারাবন্দিদের বিচার দ্রুত শেষ করা হবে : আইনমন্ত্রী
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, কারাবন্দিদের বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। কারাগারকে সংশোধনাগারে পরিণত করার জন্য আধুনিক কারা আইন ও পরিবর্ধিত কারাবিধি প্রণয়ন করা হচ্ছে। আজ শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান প্রকল্পের পরিচালক মো. জাফরুল হাসান বক্তৃতা করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমের সাফল্য নির্ভর করছে জনসচেতনতার ওপর। কারণ এখনো এ দেশের জনগণের একটি অংশ দরিদ্র ও নিরক্ষর। এই দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগণ তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে ততটা সচেতন নয়। তাই ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া দেশের সব বিচারক, আইনজীবী, এনজিওকর্মী ও সুশীল সমাজকে সরকারের আইনগত সেবা প্রদান কার্যক্রমের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার সরকার গঠনের পর আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করেন এবং সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর এই আইনের বাস্তবায়ন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠন করলে উক্ত আইনের বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে বেগবান ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় কতিপয় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশের ৬৪টি জেলায় জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে গঠন করা হয় জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি। জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং চৌকি আদালত, শ্রম আদালত ও সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে সেখানে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
আনিসুল হক বলেন, বর্তমানে এসিডদগ্ধ নারী-পুরুষ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলা, বিনা বিচারে আটক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী, পাচারকৃত নারী বা শিশুসহ নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অক্ষম যেকোনো নাগরিককে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এজন্য প্রত্যেক জেলায় লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করে সেখানে একজন করে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা আইনগত সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি বিনামূল্যে আইনগত পরামর্শ প্রদান এবং পক্ষগণের মধ্যেকার বিরোধ বা মামলা বিকল্প বিরোধ পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করছেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে এখন বিশ্বের উন্নত দেশের মতই অফিস চলাকালীন আইনি পরামর্শের জন্য দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় স্থাপিত টোল ফ্রি জাতীয় হেল্প লাইন কল সেন্টারে ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে আইনি সেবা নিতে পারছেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ করে কারাবন্দিদের বিচার দ্রুততম সময়ে শেষ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। দরিদ্র কারাবন্দিদের দুর্দশা লাঘবে প্রয়োজনীয়, দায়িত্বশীল এবং পরিবর্ধিত আইনি কাঠামো তৈরি করা বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচি। কারাবন্দিদের মামলায় যথাসময়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে আইনগত সহায়তা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পুর্নবাসন প্রক্রিয়া গ্রহণেও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে।’