ভৈরব প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক মনসুরের ইন্তেকাল
কিশোরগঞ্জের ভৈরব প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক কালেরকণ্ঠ ও দেশ টেলিভিশনের ভৈরব প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মনসুর (৫৩) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা সন্তান, দুই ভাই, তিন বোনসহ অসংখ্য অত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান। তাঁর অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুল্লাহ আল মনসুর লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েক বছর যাবত চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর অবস্থার অবনতি হলে চলতি বছরের শুরুতে তাঁকে ঢাকার বেশ কয়েকটি উন্নত হাসপাতালসহ ভারতের হায়দরাবাদ ও নয়াদিল্লিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সে অবস্থায় আজ সোমবার সকাল ৮টার দিকে ভৈরব শহরের কমলপুর আলশেফা জেনারেল হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মনসুর পৌর শহরের ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়ার ভৈরব বেপারী বাড়ীর মৃত আবদুল হাসিম মিয়ার ছেলে এবং বিশিষ্ট চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মারুফের ছোট ভাই ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ওষুধের ফার্মেসি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সুবাধে তিনি ভৈরব উপজেলা ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছিলেন।
আব্দুল্লাহ আল মনসুর ছিলেন একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক। ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অনেক দিনের। আম্পায়ার হিসেবে স্থানীয়ভাবে তাঁর বেশ খ্যাতি ছিলো। তিনি উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। তিনি দীর্ঘদিন ভৈরবের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সম্মানীত সদস্য হিসেবে খুব কাছ থেকে সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। নতুন মুখ নির্বাচনে তিনি বেশ মেধার পরিচয় রাখতেন।
আব্দুল্লাহ আল মনসুরের প্রাণপ্রিয় সংগঠন ছিলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর থাকতেন। আর সেই চেতনা থেকেই ১৯৮৭ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন স্থানীয়ভাবে অগ্রসৈনিক। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর বলিষ্ঠ অংশগ্রহণ ছিলো সহযোদ্ধাদের জন্য প্রেরণার উৎস। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ইত্যাদি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ধাপ অতিক্রম করে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া ও যুব সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় কেবি পাইলট মডেল হাইস্কুল মাঠে আব্দুল্লাহ আল মনসুরের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আলহাজ নাজমুল হাসান পাপন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে মরহুমের মরদেহে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘মনসুর ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন খাঁটি ভদ্রলোক। তাঁর মতো মনের মানুষ পাওয়া আজকাল অনেক দুর্লভ।’
এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি, বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. সায়দুল্লাহ মিয়া বলেন, ‘মনসুর শুধু সাংবাদিক হিসেবে যে খুব ভালো লিখতেন, তা নয়। তিনি সংগঠক হিসেবেও বেশ দক্ষ ছিলেন।’
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ভৈরব পৌরসভার মেয়র, বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান, প্রাণখোলা মনের একজন ভালো মানুষ ছিলেন মনসুর।
ভৈরব প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. জাকির হোসেন কাজল বলেন, ভৈরবের সাংবাদিকরা একজন বিচক্ষণ সাংবাদিক নেতা এবং একজন ভালো সাংবাদিক হারালেন। এ ক্ষতি দীর্ঘদিনেও পূরণ হবে না।
এ সময় মরহুমের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাঁর বড় ভাই ডা. আব্দুল্লাহ আল মারুফ।
ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাংবাদিক নেতারা আব্দুল্লাহ আল মনসুরের মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। পরে একে একে স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা জানায়। শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপজেলা ও পৌর শাখাসহ সহযোগী সংগঠন। শ্রদ্ধা জানায় উপজেলা ও পৌর বিএনপিও। পরে সাংসদ পাপনসহ কয়েক হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে ভৈরব বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা জামিল হুজুরের ইমামতিতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ভৈরব পৌর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।