রোহিঙ্গা পরিবারটি শূন্যরেখা থেকে ফিরেছে, প্রত্যাবাসন নয়
মিয়ানমারের তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে পাঁচ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার মিয়ানমারে ফিরেছে বলে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, সেটি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় পড়ে না বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘গতকাল রাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তমব্রু শূন্যরেখায় অবস্থান করা পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার মিয়ানমারে ফেরত গেছে বলে প্রচার হয়েছে। ওই শূন্যরেখাটি মিয়ানমারের অংশবিশেষ। তাই এটি কোনোভাবেই প্রত্যাবাসনের পর্যায়ে পড়ে না। তারা তাদের দেশে আসা-যাওয়া করতেই পারে। সুতরাং এটি প্রত্যাবাসন নয়।’
‘ওই শূন্যরেখায় প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা যদি তাদের দেশে চলে যায় বা তাদের সরকার তাদের নিয়ে যায়, এটি খুবই ইতিবাচক। আর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হবে,’ যোগ করেন কমিশনার।
ঢাকা ও নেপিদোর মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার মধ্যে পাঁচ সদস্যের পরিবারটি রাখাইন রাজ্যে ফিরেছে বলে বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ এখনো যথেষ্ট নিরাপদ নয়।
গত জানুয়ারি মাসে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে বলা হয়, দুই বছর ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরবে। মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক আবাসন তৈরি করেছে। সেখানে দুটি অভ্যর্থনা ক্যাম্পও করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পাঁচ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা মুসলিম পরিবার আজ সকালে রাখাইনয়ের তাংপিওলেতেয়া অভ্যর্থনা ক্যাম্পে এসে পৌঁছেছে।’
ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের যাবতীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে তাদের চাল, মশারি, লুঙ্গি, টি-শার্ট ও রান্নার সরঞ্জাম দেয় বলে সরকারি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরওয়ার কামাল বলেন, ‘শূন্যরেখার কোনারপাড়া জায়গাটি হচ্ছে মিয়ানমারের। সুতরাং ওদের সীমান্ত থেকে কেউ ওদের দেশে গেলে ওটাকে চলে যাওয়া বা প্রত্যাবাসন বোঝায় না। কারণ, ওই জায়গা তো তাদেরই। তবে চলে যাওয়া শুরু হলে ভালো হবে। আমরাও চাই, রোহিঙ্গারা তাদের দেশে চলে যাক।’
স্থানীয় শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল শনিবার তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া জিরো পয়েন্ট থেকে আখতার কামাল নামের এক রোহিঙ্গা ব্যক্তি তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে গোপনে মিয়ানমারে চলে গেছেন। আর সে দেশে পৌঁছার পর পরই দেশটির কর্মকর্তা তাদের স্বাগত জানিয়েছে বলেও জানা যায়।
ওই জিরো পয়েন্টের রোহিঙ্গা মাঝি দিল মোহাম্মদ জানান, আখতার কামাল মিয়ানমারের মংডু জেলার বলিবাজারের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি গোপনে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাতের আঁধারে সবার অজান্তে নিজ দেশে গেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন পুরুষ, তিনজন নারী ও একজন শিশু রয়েছে।
এ ব্যাপারে তমব্রু শূন্যরেখার বাসিন্দা আরিফ নামের এক রোহিঙ্গা ব্যক্তি জানান, আখতার কামাল দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমার সরকারের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতেন। এ অবস্থায় তাঁর দেশে ফেরা এবং সে দেশে তাঁকে স্বাগত জানানোর বিষয়টি প্রত্যাবাসনের সহজ প্রক্রিয়াকে জটিল করার একটি অংশ।