চাহিদা ও দাম দুটোই কম ইলিশের
বাঙালির নতুন বছর বরণ মানেই সকালে উঠে পান্তা ইলিশ খাওয়া। কিন্তু দিন দিন জাতীয় মাছ ইলিশের প্রতি যেন আগ্রহ কমছে মানুষের। যত দিন যাচ্ছে পান্তার সঙ্গে ইলিশের পরিবর্তে ভর্তা, সবজি বা অন্য মাছের চাহিদা বাড়ছে।
একটা সময় পয়লা বৈশাখে ইলিশ ছাড়া যেন জমতোই না। ফলে এপ্রিলের শুরুতেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেত ইলিশের দাম। তবে গত কয়েক বছর থেকে এ রীতির পরিবর্তন ঘটেছে। যার অন্যতম কারণ হিসেবে বিক্রেতা ও ক্রেতারা বলছেন, বৈশাখে পান্তার সঙ্গে ইলিশ না খেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানের কথা।
গত বছর থেকে যার প্রচলন সবচেয়ে বেশি ঘটে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবারও প্রধানমন্ত্রী পয়লা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি পয়লা বৈশাখের খাদ্য তালিকা হিসেবে- খিঁচুড়ি, সবজি, মরিচ ভাজা, ডিম ভাজা ও বেগুন ভাজা খাবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও বৈশাখকে কেন্দ্র করে আড়তদাররা ইলিশের মজুদ গড়েছিলেন। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় মাছ থাকলেও বাজারে ইলিশের ক্রেতা নেই। তাই অনেকটা অলস সময় পার করছেন দোকানিরা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না ইলিশের।
অন্য বছরের এ সময় যেখানে মাছের বাজারে ঢোকাই কষ্টকর ছিলে এ বছর সেখানে বাজার অনেকটাই ফাঁকা। চোখে পড়ার মতো ক্রেতা নেই মাছ বাজারে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের পর বৈশাখকেন্দ্রিক ইলিশের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। সেই সঙ্গে কমে দামও। গত বছরের মতো এবারও ইলিশের চাহিদা কম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা এক কেজি থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি করছেন ১৩০০-১৫০০ টাকা পিস। ৬০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি করছেন ৬০০-৭০০ টাকায়। আর ৩০০-৫০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি করছেন ৩০০-৪০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বাজারে অনেক ইলিশ আছে। তবে চাহিদা নেই। দামও অনেক কম। দেখেন বাজারে তেমন কোনো কাস্টমারও নেই। যা কিছু ক্রেতা আছে তাদের বেশিরভাগ অন্য মাছের।
জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমরা তো বৈশাখকে কেন্দ্র করে বড় ইলিশের মজুদ করেছিলাম। কিন্তু চাহিদা না থাকায় এখন বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতারা ইলিশের প্রতি তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ৭০০-৮৫০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি করছি হালি প্রতি ২৫০০-২৭০০ টাকায়। আর এক কেজির ইলিশ বিক্রি করছি হালি প্রতি ৩০০০-৩২০০ টাকায়।
হাতিরপুল বাজারের সাহেব মিয়া বলেন, ‘অনেক বছর ধরে মাছের ব্যবসা করি। অন্য বছর বৈশাখ এলে ইলিশের দাম এক কেজির প্রতি পিস দুই হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যেত। কিন্তু এবার যেমন চাহিদা কম তেমনি দামও। গত বছরের চেয়ে এবারের চাহিদা আরো বেশি কমে গেছে। তাই এখন আমাদের লোকসান গুণতে হবে।’
সাহেব মিয়া বলেন, মূলত প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মানুষ বৈশাখে ইলিশ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তারা এখন ইলিশের পরিবর্তে ভর্তা, ভাজিসহ অন্য খাবারে ঝুকেছে। তাই ইলিশের চাহিদা ও দাম দুটোই কম।
রাজধানীর বাজারগুলোতে ইলিশের চাহিদা ও দাম কম থাকলেও অন্য মাছের দাম অনেক বেড়েছে। অধিকাংশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকার ওপরে। বিভিন্ন বাজারে মাছ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানগেছে। তারা বলছেন, পয়লা বৈশাখের কারণেই মাছের দাম বেড়েছে। কারণ ইলিশ বেশি এলেও অন্য মাছের মজুদ কম।