ফাঁসির রায় শোনার কিছুক্ষণ আগেই পালালেন আসামি!
সাতক্ষীরায় এক গৃহবধূকে হত্যার দায়ে তাঁর স্বামী কামরুল সানাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া মামলার তিন আসামি মালিদা খাতুন, মাহমুদ গাজী ও নজির গাজীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক হোসনে আরা আক্তার এই রায় দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এর আগে সকাল ১০টার দিকে আসামি কামরুল সানাসহ চার আসামি আদালতে হাজিরা দেন। তাঁরা উচ্চ আদালতে থেকে জামিনে ছিলেন। কিন্তু আজ রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে তাঁরা পালিয়ে যান। তাঁদের অনুপস্থিতিতে পরে রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই যৌতুকের দাবিতে শ্যামনগর উপজেলার মিরগাং গ্রামের কামরুল সানা তাঁর স্ত্রী সালমা বেগমকে দরজার হাক দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। একপর্যায়ে তাঁর মৃত্যু হলে আসামি কামরুল সানা সালমার মুখে বিষ ঢালেন। এরপর সবাইকে বলেন, তাঁর স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন।
এ ঘটনায় সালমার ভাই রাশিদুল ইসলাম শ্যামনগর থানায় একটি মামলা করেন। এরপর পুলিশ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। আদালত এ মামলায় ১২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি আইনজীবী জহুরুল হায়দার। বিবাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবুবকর সিদ্দিক।
আসামিদের পলায়ন নিয়ে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
এদিকে আদালতের কার্যক্রম চলাকালে চার আসামির পলায়ন নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি জহুরুল হায়দার বলেন, ‘চার আসামির প্রত্যেকেই তাঁদের আইনজীবী আবুবকর সিদ্দিকীর মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাজিরা দেন। এ সংক্রান্ত কাগজপত্রও আদালতে পাঠানো হয়। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আসামিদের ডাকা হলে কোনো সাড়া মিলছিল না। তাঁরা কাঠগড়ায় ওঠেননি। বারবার পুলিশ তাঁদের নাম ধরে ধরে ডাকলেও তাঁরা জবাব না দিয়ে সরে পড়েন। পরে আদালতের কার্যক্রম কিছু সময় বিরতি দিয়ে আবারও ডেকে তাঁদের না পেয়ে বিচারক রায় ঘোষণা করেন। আসামির পলায়নে পুলিশের দায়িত্ব পড়ে না। কারণ জামিনে থাকা আসামিরা হাজিরা দিয়েও কাঁঠগড়ায় আসেননি।’
তবে বিবাদীপক্ষের আইনজীবী আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমার মক্কেলরা হাজিরা দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদেরকে কাঁঠগড়ায় তুলতে ডাকাই হয়নি। এ অবস্থায় রায় ঘোষণা করা হয়েছে। কাঁঠগড়ায় তাঁদের ডেকে আনার দায়িত্ব আদালতের পুলিশের। কিন্তু তাঁদের তো ডাকাই হয়নি। ফলে তাঁরা পলায়নের সুযোগ নিয়েছে।’
অপরদিকে সাতক্ষীরা সদর কোর্ট পরিদর্শক আশরাফুল বারী বলেন, ‘জামিনে থাকা আসামিদের দায়িত্ব ডাক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের নিজ দায়িত্বে কাঁঠগড়ায় ওঠা। কিন্তু তাঁরা হাজিরা দিলেও কাঁঠগড়ায় যথা সময়ে দাঁড়াননি। কাঁঠগড়ায় দাঁড়ালেই তার দায়িত্ব পড়ত কোর্ট পুলিশের। কিন্তু তাঁরা তো সুযোগ বুঝেই পালিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে আশরাফুল বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট আদালত ৫১৪ ধারায় আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও নিতে পারেন।’
বিশেষ পিপি জহুরুল হায়দার জানান, আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে। আগামী রোববার বিচারক হোসনে আরা আক্তার আসামিপক্ষের আইনজীবীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।