রাঙামাটি রেড ক্রিসেন্ট নির্বাচনে জাল ভোটের অভিযোগ
আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির রাঙামাটি ইউনিটের নির্বাচনে জাল ভোটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ অভিযোগে ভোট শেষ হওয়ার তিন ঘণ্টা আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈকত রঞ্জন চৌধুরী।
নির্বাচনের আগেই সাবেক এক শিবির নেতাসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ভাইস চেয়ারম্যান ও পাঁচ সদস্যের পরিষদ।
শহরের আবদুল আলী একাডেমি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শুধু সাধারণ সম্পাদক পদে মুখোমুখি হয়েছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান ও সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সৈকত রঞ্জন চৌধুরী। নির্বাচনের আগে থেকে এ পদে মাহফুজুর রহমানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় ১৭ মার্চ ও ২৬ মার্চে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে। মাহফুজুর রহমানকে নিয়ে মাঠে নামে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক মনসুর আলী। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়, রাঙামাটি চেম্বার সভাপতি বেলায়েত হোসেন, নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য ত্রিদিব কান্তি দাশ ও জেলা যুবলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিপ্লব চাকমাকে।
রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে দুপুর আড়াইটার দিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৈকত রঞ্জন চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্টের নির্বাচনে নজিরবিহীন জাল ভোট প্রদান, নির্লজ্জ দলীয়করণ এবং হামলা চেষ্টার মাধ্যমে সকল রীতিনীতির ওপরই আঘাত করা হয়েছে। দলীয় কর্মীদের নতুন ভোটার করা, কেন্দ্র পরিবর্তন করে একটি বিশেষ এলাকায় নিয়ে যাওয়া এবং একজন প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপকভাবে দলীয় প্রচারণার পরিপ্রেক্ষিতে আমি আগেই এই রকম কিছু শঙ্কা করেছিলাম এবং নির্বাচনের ১২ দিন আগেই লিখিত অভিযোগও করেছিলাম। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলাম। আফসোস, একটি নির্দলীয় প্রতিষ্ঠানকে নির্লজ্জ দলীয়করণ করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়া হলো।’
সৈকত রঞ্জন চৌধুরী আরো বলেন, ‘আমি জাল ভোটের প্রতিবাদ জানালে আমার দিকে তেড়ে আসে যুবলীগ নেতা এনএম জাহাঙ্গীর, তৈয়ব আলীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। পরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে আমাকেই কেন্দ্র থেকে বের করে দিতে দফায় দফায় চেষ্টা করে পুলিশ। এরই একপর্যায়ে দুপুর ১টায় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসি আমি।’
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য মাহফুজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক চেম্বার নেতা বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। আমি একটা জটলা দেখে সবাইকে সরিয়ে দিয়েছি। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ১৬ জন পুলিশ ছিলো, ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। আর কারো ভোট কেউ দিয়ে দিলেও আমি সেটা জানি না, কেউ আমাকে বলেনি।’নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে গণনা শেষ হয়। বিকেল ৫টায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন জানিয়েছেন, মোট ৭১৩ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এদের মধ্যে বাতিল হয়েছে ১২টি ভোট। বিজয়ী মাহফুজুর রহমান পেয়েছেন ৬৫৮ ভোট এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সৈকত রঞ্জন চৌধুরী পেয়েছেন ৪৩ ভোট।
বাঘাইছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও দীর্ঘসময় রাঙামাটিতে না আসা জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতা সুদর্শন চাকমা বলেন, ‘আমি তো শেষ কবে রাঙামাটি গেছি নিজেও ভুলে গেছি। আমি রেড ক্রিসেন্ট এর আজীবন সদস্য। কিন্তু নির্বাচন যে হচ্ছে সেটাই তো জানানো হলো না আমাকে। কোন ভূত আমার ভোট দিল ? এটা তো অনেক বড় জালিয়াতি। এটা উচিত না। ’
এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য হাজি কামালউদ্দিন। সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মো. শাওয়ালউদ্দীন, জেলা যুবলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক কামালউদ্দিন, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও বর্তমান পৌরসভার কর পরিদর্শক রেজাউল করিম রেজা, সাবেক ছাত্রশিবির নেতা ও বাঙালি ছাত্র পরিষদ সভাপতি সাংবাদিক মোহাম্মদ সোলাইমান, বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগের আহ্বায়ক এনএম জাহাঙ্গীর।