কফিনবন্দি পিয়াস এলো মায়ের কোলে
কথা ছিল, নেপাল ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরেই গ্রামের বাড়িতে মায়ের কাছে ফিরবেন। ফিরছেনও। কিন্তু কফিনে বন্দি অবস্থায়। মা সেই কফিন জড়িয়েই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। যাঁরা তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এসেছেন, তাঁদের চোখেও জল।
এমনই হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পিয়াস রায়ের মরদেহ বরিশালের নিজ বাড়িতে ফেরার পর। গতকাল দিবাগত রাত ৩টায় তাঁর মরদেহ নগরীর শীতলাখোলা এলাকায় নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
পিয়াস গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ থেকে এ বছর এমবিবিএস শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অবকাশকালীন ছুটি কাটাতে পাঁচ দিনের জন্য নেপালে গিয়েছিলেন তিনি। গত ১১ মার্চ কাঠমান্ডুর উদ্দেশে রওনা হওয়ার জন্য মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেন। পরদিন এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় আরো ২৫ বাংলাদেশি সঙ্গে পিয়াসও মারা যান। ১২ দিন পর পিয়াস ফিরল তাঁর প্রিয় শহরে।
গতকাল দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পিয়াসের লাশ গ্রহণ করেন পরিবারের সদস্যরা। তারপর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর প্রিয় শিক্ষাপীঠ গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে। সেখানে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান সহপাঠী, কলেজের অধ্যক্ষ ও কর্মচারীরা। সেখান থেকে লাশ নিয়ে আসা হয় নিজ বাড়িতে। আজ দুপুরে মহাশ্মশানঘাটে পিয়াসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
পিয়াসের লাশ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। বারবার মূর্ছা যান মা পূর্ণ রানী রায় ও বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায়।
সুখেন্দু বিকাশ রায় বলেন, ‘ছেলে ভালো ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করবে—এ স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। যা হারিয়েছি, তা কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। সরকারের কাছে কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। দ্বিতীয় কাউকে যেন এভাবে তাঁর সন্তানকে হারাতে না হয়।’