‘আমার ভেতরে কোনো ভয়ভীতি কাজ করে না’
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে বসে থাকা অবস্থায় যখন পেছন থেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছিল, তখন একটুও ভয় পাননি বলে জানালেন লেখক ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বললেন, এত কিছুর পরে এখনো ভয় পাচ্ছেন না তিনি।
আজ বুধবার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে ছাড়পত্র পেয়ে সিলেট পৌঁছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
জনপ্রিয় এই লেখক বলেন, ‘আমি আসলে একটু বোকা টাইপের মানুষ। আমার ভেতরে কোনো ভয়ভীতি কাজ করে না। এই ঘটনা যখন ঘটেছে, সে মুহূর্তেও করে নাই, এখনো করছে না। আমি অবশ্যই নিরাপদ বোধ করছি।’
শরীর কেমন—জানতে চাইলে মুহম্মদ জাফর ইকবাল জানান, তাঁর মাথায় চারটি আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করছেন তিনি। যদিও চিকিৎসকরা তাঁকে বিশ্রাম নিতে বলেছেন।
ছাড়পত্র পেয়েই প্রিয় ক্যাম্পাস শাবিপ্রবির দিকে ছুটছেন এই শিক্ষক। কারণ হিসেবে জানালেন, ‘আমার ছাত্ররা এত অস্থির হয়ে গেছে, সে জন্য আমি ক্যাম্পাসে যাচ্ছি ওদেরকে বলার জন্য, এই দেখ, আমি ভালো আছি।’
‘ওর প্রতি আমার কোনো রাগ নাই’
হত্যাচেষ্টাকারী ফয়জুলের প্রতি কোনো রাগ নেই বলে জানালেন জাফর ইকবাল। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তাদের ওপর আমার কোনো রাগ নাই। আমি তাদের জন্য এক ধরনের দুঃখ অনুভব করি যে, এত সুন্দর পৃথিবী, সেখানে এত সুন্দর সুন্দর কাজ করা সম্ভব। কিন্তু তারা সেটা না করে এই ধরনের একটা কাজ করে। মানে, জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে নিয়েছে… আমি তাদের জন্য আসলে দুঃখ অনুভব করি। তার জন্য তাদের প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। আমার মনে হয় যে, আমাদের বাংলাদেশটাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন এই ধরনের মানুষ যেন জন্ম না নেয় বা মানুষ যেন এই পথে না যায়। তারা যেন সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে। সাধারণ মানুষের মতো আমি সেটাই আশা করি। ওর প্রতি আমার কোনো রাগ নাই।’
সবার মাঝে ফিরতে পেরে নিজের আনন্দের কথা জানালেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমার খুব ভাল্লাগছে যে আমি আবার সবার মাঝে ফেরত আসতে পেরেছি। তো আমাকে পুরো ঘটনার সময় সবাই মিলে একদম ডাক্তার থেকে শুরু করে সবাই যেভাবে আমাকে যত্ন করেছেন এবং আমাকে ভালো করে তোলার জন্য সবাই এত কষ্ট করেছেন, এত ভালোবাসা দেখিয়েছেন সেটা আমি কীভাবে প্রকাশ করব আমি জানি না।’
চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া সব পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে কৃতজ্ঞতা জানান মুহম্মদ জাফর ইকবাল। কৃতজ্ঞতা জানান চিকিৎসক ও দেশের মানুষদের প্রতিও।
এর আগে সকালে জনপ্রিয় এ লেখককে ১০ দিনের চিকিৎসা শেষে সিএমএইচ থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তিনি সরাসরি চলে যান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দুপুর ১২টায় নভো-এয়ারের একটি ফ্লাইটে করে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হক, মেয়ে ইয়েশিম হকসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
গত ৩ মার্চ সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ এলাকায় শিক্ষক জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। মুক্তমঞ্চে বসে থাকা অবস্থায় পেছন থেকে তাঁর মাথায় আঘাত করেন যুবক ফয়জুল, যিনি নিজেও পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের একটি উৎসব ছিল। সেই উৎসবে অংশ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে মুক্তমঞ্চে বসে ছিলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এক যুবক হঠাৎ পেছন থেকে তাঁর মাথায় ছুরিকাঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশের একই মাইক্রোবাসে করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সিএমএইচে নেওয়া হয়।