মাহমুদুর মাকে বলেছিলেন, খুব দ্রুত আবার বাড়ি আসবেন
মাহমুদুরের শেষ আসা বাড়িতে এই বছরের জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে। সে সময় বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন, খুব দ্রুত আবার তাঁকে দেখতে আসবেন।
বিলাপের সুরে বারবার এই কথাই বলছিলেন তাঁর মা লিলি বেগম।
নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় আর বাড়ি আসতে পারবেন না এস এম মাহমুদুর রহমান রিমন (৩২)। তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে আজ যেন বড্ড বোবা হয়ে গেছেন পরিবারের সবাই।
ফরিদপুরের ছেলে এস এম মাহমুদুর রহমান রিমন চাকরি করতেন রানার গ্রুপের রানার অটোমোবাইলস কোম্পানির তেজগাঁও অফিসের হেড অব সার্ভিস পদে। সেই সুবাদে ঢাকায় থাকা। অফিসের কাজে সোমবার উড়াল দিয়েছিলেন নেপালের উদ্দেশে। কে জানত আর ফিরে আসা হবে না তাঁর নিজ দেশের মাটিতে। তার বাড়ি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের লস্করদিয়া গ্রামে। বাবার নাম মশিউর রহমান। মা-বাবার দুই ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। বিয়েও করেছেন প্রায় সাত বছর আগে। স্ত্রীর নাম সানজিদা বেগম ঝর্ণা। ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার নিকুঞ্জে ভাড়া বাসায় থাকতেন তাঁরা।
এদিকে আজ মঙ্গলবার দুপুরে মাহমুদুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা লিলি বেগম বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন। একমাত্র ভাই রুপম বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কোনো কথাই বলতে পারছেন না তাঁর বাবা মশিউর রহমান। গ্রামের এমন যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলে হারিয়ে গ্রামের মানুষও শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে।
দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের তালিকায় মাহমুদুরের নাম নেই বলে জানালেন পরিবারের লোকজন।
তাঁর চাচা শাহ মো. আফতাব উদ্দিন জানান, দুই মাস আগে মাহমুদুর বাড়ি এসেছিল। এরপর আর আসেনি নানা কাজের কারণে। তিনি জানান, মাহমুদুর ছিল পরিবারের আয়-উপার্জনের একমাত্র ব্যক্তি। তাঁর টাকায় চলত সংসার। এখন আর এই পরিবারের আয়-উপার্জনের কেউ থাকল না। এই বলে ঢুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।
গতকাল সোমবার ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহী নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি। এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।