যে প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া মুক্তি পেতে পারেন
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ সোমবার দুপুরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
এখন খালেদা জিয়া জামিন পেলেও আদালতের কিছু দাপ্তরিক কাজ শেষে তিনি মুক্তি পাবেন। তবে সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেম্বার জজ আদালতে আপিল করেন এবং চেম্বার জজ তা স্থগিত করে দেন সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত হয়ে যাবে।
আর যদি চেম্বার জজ আদালত সে জামিনের আদেশ স্থগিত না করে নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বাধা থাকবে না।
আর কোনো স্থগিতাদেশ না থাকলে হাইকোর্ট থেকে জামিনের আদেশ ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ডা. আখতারুজ্জামানের আদালতে পাঠানো হবে। এর পরে সেই আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিননামা দাখিলের অনুমতি চাইবেন। হাইকোর্টের আদেশ সঠিক কি না, তা ওই আদালতের পেশকার পরীক্ষা করে দেখবেন। তা সঠিক থাকলে পেশকার জামিননামা দাখিলের অনুমতির আবেদন ও হাইকোর্টের আদেশ বিচারকের কাছে উপস্থাপন করবেন। বিচারক তা মঞ্জুর করলে খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিননামা (বেইল বন্ড) দিতে হবে। সেই বন্ডে খালেদা জিয়ার পক্ষে একজন আইনজীবী ও একজন গণ্যমান্য ব্যাক্তি জামিনদার হবেন। অতপর সেই জামিননামা বিচারকের কাছে উপস্থাপন করা হলে বিচারক সেই জামিননামা ‘গৃহীত হইল’ বলে স্বাক্ষর করবেন এবং কারাগারে মুক্তির আদেশ পাঠাবেন।
ওই রিলিজ আদেশ পাওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবেন, যদি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার না হন।
আজ আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
হাইকোর্টে না পৌঁছায় আদালত আদেশের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন। পরে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নিম্ন আদালত থেকে রায়ের নথি হাইকোর্টে এসে পৌঁছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এর পরই গত ২২ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেন। সেইসঙ্গে স্থগিত করেন খালেদা জিয়ার অর্থদণ্ড।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে এসে পৌঁছানোর পরই আদেশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ মামলায় মোট আসামি ছয়জন। তার মধ্যে তিনজন পলাতক। এই তিনজন হলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।