গাজীপুরে শ্রমিকদের তাণ্ডব, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আজ রোববার বিক্ষোভ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা ও গাড়ি ভাঙচুর এবং সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।
পুলিশ শটগানের ১১টি গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প-পুলিশের পরিদর্শক সহিদ উল্লাহ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজন জানান, মৌচাকের কৌচাকুড়ি তেলিরচালা এলাকায় অবস্থিত এটিএস অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেশ কিছুদিন ধরে তাঁদের বেতন-ভাতা প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রায় প্রতি মাসেই ওই সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করে বিলম্বে পরিশোধ করে। কয়েকদিন আগে কারখানা কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা চলতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতাসহ পাওনা বকেয়াদি ১০ মার্চের মধ্যে পরিশোধের দাবি জানিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিক অসন্তেষের মুখে গতকাল শনিবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে। বৈঠকে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতা আগামী বুধবার পরিশোধের ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে।
পরের দিন আজ রোববার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তাঁরা তাঁদের পাওনা পরিশোধের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ওই দাবি মেনে না নেওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কারখানার গেট তালাবদ্ধ করে কারখানার ভেতরে হামলা চালিয়ে দরজা জানালার কাঁচ ও মেশিনপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করেন। এ সময় তাঁরা কারখানার সিকিউরিটি কক্ষে অবস্থানরত কয়েকজন কর্মচারীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শ্রমিকরা বাধা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালান ও ইটপাটকেল ছুড়েন। এতে শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সহিদ উল্লাহ, উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম, কন্সটেবল মাহমুদাসহ পুলিশের সাত সদস্য আহত হন। উত্তেজিত কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বেরিয়ে পাশের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় লাঠিপেটা করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিকেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় অন্তত ১৮ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে শটগানের গুলিতে আহত সুমি ও আক্তার বানু এবং লাঠির আঘাতে আহত মাহমুদাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিল্প-পুলিশ গাজীপুর ২-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, উত্তেজিত শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের সাত সদস্য আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৮ রাউন্ড শটগানের গুলি ও তিন রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করেছে।
এ ব্যাপারে কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, এ কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক রয়েছে। প্রতি মাসেই শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করা হয়। তবে গত মাসের পাওনা চলতি মাসে পরিশোধ করতে তিন-চার দিন বিলম্ব হওয়ায় কিছু শ্রমিক সংগঠনের উসকানিতে তাদের অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।