৪৫ বছর পর দেখা, এরপর সেলফি
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাদা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৬৭ সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী তাঁরা। বিয়ের পর শিক্ষার্থী হাসিনা বানু (৬৯) চলে যান ঈশ্বরদীর পাকশীতে স্বামীর সঙ্গে। আরেক বান্ধবী রোকেয়া খাতুন (৬৮) ছিলেন ঈশ্বরদী সদরে। বিয়ের পর মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হলেও ১৯৭৩ সালের পর তাঁদের আর দেখা হয়নি।
প্রায় ৪৫ বছর পর সেই দুই বান্ধবীর দেখা হয়েছে। দেখা পেয়েই একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন, আনন্দে কেঁদে ফেলেন। কুশল বিনিময় করেন। মেতে ওঠেন আনন্দে। এরপর নাতির মুঠোফোন দিয়ে সেলফি তোলেন হাসিনা বানু।
এ রকম হাজারো বন্ধুর মিলনমেলা ঘটে আজ শনিবার, বাঁশেরবাদা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। দুই দিনব্যাপী শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের প্রথম দিন ছিল আজ।
সকালে জাতীয় ও শতবর্ষপূর্তি উৎসবের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও বিভিন্ন সময়ে প্রয়াত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। নবীন স্কাউটদের কুচকাওয়াচ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনন্দ আড্ডা। নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা মিশে যান পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে।
স্মৃতিচারণ পর্বে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বশির আহম্মেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমার শরীফ। বিশের অতিথির বক্তব্য দেন পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন, ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান ও ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাছরিন আক্তার প্রমুখ। প্রধান আলোচক হিসেবে বিদ্যালয় নিয়ে আলোচনা করেন বিএসবি ক্যামব্রিয়ান এডুকেশনের চেয়ারম্যান মতলেবুর রহমান।
শামসুর রহমার শরীফ বলেন, বিদ্যালয়টি শতবর্ষের বহু ইতিহাস নিয়ে এগিয়ে চলছে। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বহু আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে দেশের জন্য কাজ করেছেন। অনেকেই স্ব ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। সেই সঙ্গে এ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন প্রজন্ম দেশ ও জাতীর কল্যাণে কাজ করবে এ আশা করি।
স্মৃতিচারণ পর্ব শেষে নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত আড্ডায় মিলিত হন। একে অপরের সঙ্গে সুখ-দুঃখের আলোচনা ও হাসি আড্ডায় সময় কাটান। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
কাল রোববার দ্বিতীয় দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে কথা রয়েছে।
বিদ্যালয়টির আদি নাম ছিল মোহিনী পন্ডিতের পাঠশালা। ১৯১৭ সালে বিদ্যালয়টিকে বাঁশেরবাদ মিডিল ইংলিশ স্কুল (এম.ই) স্কুল নামকরণ করা হয়। তখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হতো। ১৯৬৫ সালে বাঁশেরবাদা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় নাম দিয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরু হয়।