বাসা ভাড়া নিতে এসে বাড়ির মালিককে খুন!
রসুল ভিলা। রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়ার ২৮৮ নম্বর বাড়ি। নাখালপাড়া রেল ক্রসিং থেকে ১০০ গজ দূরে পাঁচতলা বাড়িটির নীচ তলায় নির্মমভাবে খুন হন আমেনা বেগম (৬৫)। ‘টু লেট’ দেখে ভাড়া নেওয়ার জন্য বাসা দেখতে আসা এক যুবক তাঁকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কারও নিয়ে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় নিহতের ছোট ছেলে বাবু আহম্মেদ বাদী হয়ে মামলার করলেও হত্যার কোনো ক্লু (হত্যার কারণ) উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল রসুল ভিলায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনের সামনে কম্পিউটারে কম্পোজ করা সাদা কাগজে একটি ‘টু লেট’ ঝুলছে। ভেতরে ঢুকতেই নীচ তলার দরজার সামনে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। যে ফ্ল্যাটে বাড়ির মালিক আমেনা বেগমকে খুন করা হয়, তার পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া গৃহবধূ মনি জানান, বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে এক যুবক বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে ভেতরে প্রবেশ করেন। আমেনা বেগম দ্বিতীয় তলা থেকে চাবি নিয়ে এসে দরজা খুলে ওই যুবককে বাসা দেখানোর জন্য ভেতরে ঢোকেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর আমেনা বেগমের ছোট ছেলের স্ত্রী বর্ষা শ্বাশুরীকে খুঁজতে এসে নীচ তলার খালি বাসার রান্না ঘরে রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায়। তখন তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
ঘটনার সময় ভবনের দ্বিতীয় তলায় আমেনা বেগমের বাসায় শুধুমাত্র ছোট ছেলের স্ত্রী বর্ষা ও পাঁচ বছরের নাতনী ছিলো।
এ বিষয়ে বর্ষার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ এ বিষয়ে কারো সঙ্গে কোনো কথা বলতে নিষেধ করে গেছে’। তবে এসময় ঘরে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা একই ধরনের বর্ণনা দেন।
এদিকে, শুক্রবার জুমআর নামাজের পর পশ্চিম নাখালপাড়া বড় মসজিদে জানাযা শেষে আমেনা বেগমের মরদেহ বাসার পাশেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
স্বজনরা জানান, আমেনা বেগমের স্বামী এবং মেজো ছেলে কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। দ্বিতীয় তলায় ছোট ছেলে, ছোট বউ ও নাতনী নিয়ে থাকেন। তৃতীয় তলায় বড় ছেলে তার পরিবার নিয়ে থাকেন। চতুর্থ ও পঞ্চমতলা ভাড়া দেওয়া আছে। আর তিন মেয়ে ওই এলাকাতেই শ্বশুর বাড়িতে থাকেন।
স্বজনরা আরো জানান, আমেনা বেগমের বড় ছেলে কোনো কাজ করেন না। ছোট ছেলে লিবিয়ায় থাকেন। বছরে একবার দেশে আসেন। এক মাস আগে ছোট ছেলে দেশে এসেছেন। ২-১ দিনের মধ্যেই তার লিবিয়া চলে যাওয়ার কথা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে তেজগাঁও থানায় ছোট ছেলে বাবু আহম্মেদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন (মামলা নম্বর-১২)। মামলার এজাহারে তিনি হত্যার একই ধরনের বর্ণনা দিয়ে উল্লেখ করেছেন, হত্যাকারী তার মায়ের সঙ্গে থাকা দুই ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন। দুই হাতে থাকা দুটি স্বর্ণের বালা ও একটি স্বর্ণের আংটি নিয়ে নিয়ে গেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) আমিনুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে জানান, মামলা হয়েছে। পরিবার ও আশপাশের লোকজনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, বাসা ভাড়া দেখতে এসে স্বর্ণালঙ্কারের লোভে কোনো বখাটে যুবক এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে। এটি কোনো পরিকল্পিত হত্যা কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।