আবদুল হাই বাচ্চুকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ
সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে চতুর্থ দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে দুদক কর্মকর্তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে আসেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় অসুস্থতা বোধ করলে চিকিৎসক এনে বাচ্চুর শারীরিক পরীক্ষা করায় দুদক।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ দিতে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে এরই মধ্যে ৫৬টি মামলা দায়ের করেছে দুদক। এসব মামলায় ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফখরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হলেও এখনো সন্দেহভাজনদের তালিকায় আছেন সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। তবে অভিযোগের ব্যাপারে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি বাচ্চু।
২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর এই তিন শাখা থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর এই তিনদিনে ৫৬টি মামলা করে দুদক।
২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ২৭ কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া ৫৬টি প্রতিষ্ঠানও এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সাজেদুর রহমান, কাজী ফখরুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, উপমহাব্যবস্থপনা পরিচালক ফজলুস সোবহান, কনক কুমার পুরকায়স্থ, সাময়িক বরখাস্তকৃত উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ মোনায়েম খান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সেলিম, মহাব্যবস্থাপক জয়নুল আবেদীন চৌধুরী, মো. মোজাম্মেল হোসেন, সাময়িক বরখাস্তকৃত মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শামীম হাসান, মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান, গোলাম ফারুক খান, চাকরিচ্যুত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী, সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক কোরবান আলী, উপমহাব্যবস্থাপক ওমর ফারুক, চাকরিচ্যুত উপমহাব্যবস্থাপক শিপার আহমেদ, সাময়িক বরখাস্তকৃত উপমহাব্যবস্থাপক এস এম ওয়ালিউল্লাহ, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. জহির উদ্দিন, মো. ইমরুল ইসলাম, আবদুস সবুর, আবদুস সাত্তার খান, পলাশ দাশ গুপ্ত, ইকরামুল বারী, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক সরোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপক মো. মুহিবুল হক, চাকরিচ্যুত উপব্যবস্থাপক এস এম জাহিদ হাসান, উপব্যবস্থাপক এন এ তোফিকুল আলম।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ঋণ বিতরণের অনিয়মের কারণে ব্যাংকটি ২০১২ সাল থেকে লাভের পরিবর্তে উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে। ওই বছর দুই কোটি ৭৯ লাখ টাকা মুনাফা ছিল ব্যাংকটির। এরপর থেকে ব্যাংকটি নিয়মিত লোকসান গুনে আসছে। বেসিক ব্যাংক ২০১৩ সালে ৫৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ১১০ কোটি দুই লাখ টাকা এবং ২০১৫ সাল ২৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা লোকসান করে।
২০০৯ সালে আবদুল হাই বাচ্চুকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সময় থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে। পরে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।